খবরবাড়ি ডেস্কঃ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালিত হয়েছে। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও জমিদার-মহাজনদের শোষণের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের ঐতিহাসিক বিদ্রোহের স্মরণে প্রতি বছর এই দিনটি পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও তাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধের দাবী জানানো হয়।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের সাতানা আলোর ঘর শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের মাঠে দিবসটি উপলক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অবলম্বন সোমবার (৩০ জুন) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাঁওতাল নেতা-কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আদিবাসী নেত্রী ললিতা মুরমুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অবলম্বনে নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের সদর উপজেলা আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, দৈনিক সময়ের আলো প্রতিনিধি সাংবাদিক কায়সার রহমান রোমেল, সাংস্কৃতিক কর্মী মানিক বাহার, নারী নেত্রী মাজেদা খাতুন, নাজমা বেগম, সেলিনা আক্তার সোমা, আদিবাসী নেতা গৌড় চন্দ্র পাহাড়ি, সুশীল টপ্য, মিলন তিগ্যা, সোনালী মার্ডি ও সুরভী মার্ডি প্রমুখ। বক্তারা সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট এর গুরুত্ব এবং বর্তমান সময়ে সাঁওতালদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সাঁওতাল বিদ্রোহসহ সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সকল শহিদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বক্তারা বলেন, সিধু-কানু, চাঁদ-ভৈরবীর নেতৃত্বে সংগঠিত এই বিদ্রোহ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে শোষিত মানুষের এক সাহসী প্রতিবাদ। এই বিদ্রোহ একদিকে যেমন ব্রিটিশদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তেমনি স্থানীয় জমিদার ও মহাজনদের জুলুম থেকেও মুক্তির পথ দেখিয়েছিল। যদিও বিদ্রোহ সফল হয়নি, তবে এটি পরবর্তীকালে বহু কৃষক ও আদিবাসী বিদ্রোহের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
আলোচনা সভায় সাঁওতালদের ভূমি অধিকারের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। বক্তারা ২০১৬ সালের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ওই ঘটনায় সাঁওতালদের উপর যে বর্বর হামলা ও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল, তার ক্ষত আজও শুকায়নি। তারা অবিলম্বে সাঁওতালদের পৈতৃক ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের উপর যেকোনো ধরনের নির্যাতন বন্ধের দাবী জানান।
বক্তারা আরো বলেন, সাঁওতালদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশের উপরও জোর দিয়ে বলেন, সাঁওতাল সংস্কৃতি বাংলাদেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। একইসাথে, সাঁওতাল শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার দাবী জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাঁওতাল তরুণ প্রজন্ম তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগের ইতিহাস স্মরণ করে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। গৌরবময় সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাসকে পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তারা বলেন, সাঁওতাল বিদ্রোহের চেতনাকে ধারণ করে তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.