তোফায়েল হোসেন জাকিরঃ নিভৃত গ্রামে বেড়ে ওঠা শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম (২১)। ইতোমধ্যে তিনি পরীক্ষামূলক ভাবে ডামি আর.সি প্লেন ও স্পিড বোট তৈরি করে তা উড্ডয়নে সফল হয়েছেন। এছাড়াও তিনি বেশকিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্র তৈরি করে সফলতাও পেয়েছেন। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের পূর্ব গোপালপুর গ্রামের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম সম্প্রতি নানা ধরনের যন্ত্র বানিয়ে এলাকা জুড়ে আলোচনায় এসেছেন। সামিউল ইসলাম পূর্ব গোপালপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও লাইজু বেগম দম্পতির ছেলে। তিনি আমলাগাছী বিএম উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি এবং পলাশবাড়ী সরকারি কলেজ হতে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে ঢাকার ইস্টার্ণ ইউনিভার্সিীটতে বিএসসি ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ চতুর্থ বর্ষে অধ্যায়ন রয়েছেন।
স্থানীয় জানান, সামিউল ছোট থেকে অত্যন্ত মেধাবী। পুরো শৈশব গ্রামে বেড়ে ওঠা। দূরন্তপনার এই ছেলেটি তখন থেকে কখনও ডাক্তার আবার কখনও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন যেন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দিয়ে অল্প খরচে তৈরি করা যাবে এবং দুইজন যাত্রী নিয়ে প্রতি ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার যাওয়া যাবে একটি পরীক্ষামূলক ডামি আর.সি প্লেন তৈরী করেছেন সামিউল। এছাড়াও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার জন্য তৈরি করেছেন সৌর প্যানেল দিয়ে যান্ত্রিক বাইসাইকেল। এর পাশাপাশি তৈরি করেছেন ১০০টি ডিম ফুটানোর আধুনিক ইনকিবিউটর।
এরআগে সামিউল চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও তা না হতে পেরে এখন চিকিৎসক রোবট বানানোর কাজ করছেন। রোবটটির নাম দিয়েছেন ‘ডা. নীলা’। এই রোবটটি মানুষের জ্বর, ডায়াবেটিস পরিমাপসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দিবে। এটি বানানো প্রায় শেষ পর্যায়ে।
শুধু তাই নয়, সামিউল তৈরি করেছেন ১২ হর্সের চার্জার সেচযন্ত্র। যেখানে বিদ্যুৎ নেই এই চার্জার সেচপাম্প দিয়ে চালানো যাবে প্রয়োজনীয় পানির কাজ। তার আরেকটি অন্যতম যন্ত্র তৈরি করেছেন মাটিকাটার স্কেভেটার (ভেকু) মেশিন। অতিরিক্ত তেল দিয়েএ মেশিন চললেও সামিউল তৈরি করেছেন তেল ছাড়াও শুধু হাত ও পায়ের সাহায্যে বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বাভাবিক গতিতে চলবে এই যন্ত্রটি।
সামিউল আরো তৈরি করেছেন পরিবেশ রক্ষায় স্মপার্ট ডাসবিন, মানুষ ছাড়া আগুন শনাক্ত ও নেভানোর কাজ করবে এমন রোব, সাইকেলের চাকা দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি, বন্যা এলাকায় কম খরচে উদ্ধার অভিযান পরিচালনার স্পিড বোট, ফায়ার ফাইটার রোবট গাড়ি, চোর ধরা মেশিন, মরিচ কুচি মেশিন, ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্য রোবটও বানাচ্ছেন।
এদিকে; সামিউল ইসলামের এমন অভিবন সাফল্যেল জন্য খুশি ও গর্বিত তার পিতা-মাতা ও পরিবারসহ স্থানীয়রা। স্বল্প খরচে অতি প্রয়োজনীয় ও সময় উপযোগী এসব আবিস্কারে তাকে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা করলে দেশ ও মানুষের উপকার হবে বলে জানান তারা।
স্থানীয় আমিনুল ইসলাম জানান, সামিউল অনেক প্রয়োজনীয় যন্ত্র বাজারের চেয়ে কয়েকগুণ কম করছে দেশীয়ও সবকিছু ব্যবহার করে তৈরি করছে। তাকে সহযোগিতা করলে দেশ ও জনগণের কল্যাণকর হবে।
যন্ত্র তৈরির কারিগর সামিউল ইসলাম বলেন, বাজার দামের চেয়ে অধিক কম খরচে এবং নিজস্ব শ্রমকে কাজে লাগিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের প্রয়োজনীয় যন্ত্র বা ডিভাইস তৈরি করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমি শিশুকাল থেকেই ছোট-ছোট যন্ত্রের মাধ্যমে প্রজেক্ট তৈরি করতাম। যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি তখন একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ইলেকট্রিক প্রতীক বানিয়ে দিয়ে পুরস্কার পেয়েছি। আর যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন পরপর দু’বার বিজ্ঞান মেলায় প্রথম হয়েছি। আমার এই কর্মদক্ষতা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রূপ দিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
সামিউল ইসলামের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমর এ ছেলেটা ছোটবেলা থেকে উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়ে সারাদিন থাকতো। এলাকাবাসীর যান্ত্রিক কিছু নষ্ট হলে ভালো করে দিতো। যেসব যন্ত্র মেকাররা ঠিক করতে পারতো না সেগুলো সামিউল অল্প সময়ে ঠিক করে দিতো। সামিউল জন্য সবার দো’আ ও সহযোগিতা কামনা করছি।