মা-বাবার স্বপ্ন থাকে তাদের ছেলে-মেয়ে ডাক্তার হবে। সে লক্ষ্যে সন্তান মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলে খুশির বন্যায় ভাসেন বাবা-মা।
অথচ এর উল্টোটা ঘটেছে শিমুল মিয়ার পরিবারে। ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে কিন্তু আনন্দের পরিবর্তে দুশ্চিন্তায় ছেয়ে গেছে শিমুল মিয়ার মা-বাবার চোখে-মুখে।
দুশ্চিন্তার কারণ একটাই, কীভাবে ছেলেকে ভর্তি করাবেন আর কীভাবে চলবে মেডিকেলে পড়ালেখার খরচ? এমন পরিস্থিতির একটাই কারণ, আর্থিক অনটন। চান্স পেয়েও টাকার অভাবে মেডিকেলে ভর্তি হতে পারছেন না শিমুল।
গত ১৭ জানুয়ারী মেডিকেল কলেজ সমূহের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পূর্ব নয়নপূর গ্রামের মোঃ কালু মিয়া ছেলে মোঃ শিমুল মিয়া শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ৫০৯তম স্থান করে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
জানা যায়, শিমুলের বাবা মোঃ কালু মিয়া কাঠ মিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক কেষ্ট। নিজের কোনো জমিজমা নেই। উত্তরাধিকার সূত্রে বসতবাড়ির দুই শতক জমি পেয়েছেন যেখানে ছোট একটা ঘর করে পরিবার নিয়ে কোনোমতে বসবাস করেন কেষ্ট কালু মিয়া।
স্ত্রী, ছেলে মোঃ শিমুল মিয়া আর এক মেয়ে নিয়ে সেই ছোট ঘরেই তাদের বসবাস।
শিমুল মিয়া ২০২২ সালে আমলাগাছী বিএম হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০২৪ সালে রংপুর সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে।
উভয় পরীক্ষায়ই সে জিপিএ-৫ পেয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখে। স্কুল-কলেজর শিক্ষকদের সহযোগিতায় উচ্চ মাধ্যমিক পাস করালেও এখন মেডিকেলে চান্স পাওয়া ছেলের পড়ালেখার খরচ কীভাবে চালাবেন সে চিন্তায় ঘুম নেই কেষ্ট শিমুলের দুই চোখে।
শিমুলের বাবা বলেন, কাঠ মিস্তির কাজ করি কোন দিন কাজ হয় আবার কোন দিন হয় না কোন রকমে সংসার চালাই। কোনোদিন বাজার করার টাকা হয় তো কোনোদিন হয় না। খেয়ে না খেয়ে, ধার-দেনা করে, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, ছেলেকে রংপুর পড়িয়েছি কীভাবে, কার থেকে খরচ জোগাড় করেছি তা ছেলেকে কখনও বুঝতে দেইনি। ছেলের একটা মোবাইলফোনও নেই। পরিবারের মধ্যে আমার নিজের পুরাতন একটা বাটন ফোন আছে। আমি নিজেও জানি না ছেলের ভর্তি কবে। ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি করাতে পারব কিনা তাও জানি না। শিমুলের ভর্তির টাকা কোন ভাবে জোগাড় করতে পারলেও পরবর্তীতে লেখাপড়া করানোর মত ক্ষমতা আমার নেই । শিমুল অত্যন্ত মেধাবি হওয়া অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ছেলের লেখাপড়ায় । এ পর্যন্ত যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শিমুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে তিনি খুশি। তবে তার বাবার চিন্তায় তারও মন খারাপ। তিনি ডাক্তার হয়ে অবহেলিত, অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে চান।
পলাশবাড়ী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আল-ইয়াসা রহমান তাপাদার বলেন, আমি শিমুলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সে পলাশবাড়ী উপজেলার গর্ব। আমি জানতে পেরেছি সে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার মেডিকেলে ভর্তি ও অন্যান্য বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে।
সহযোগিতা করতে চাইলেঃ-
সঞ্চয়ী হিসাব নং- শিমুল মিয়া,
০২০০০১৫৪৮২৭৮৩
অগ্রণী ব্যাংক, শাখা- ঢোলভাঙ্গা,
গাইবান্ধা।
বিকাশ নং- ০১৮৬২৯৫১২৫৪