
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে পাতানো নিলামে নামমাত্র মূল্যে রাস্তার গাছ নিলামে বিক্রয়ের প্রতিকার চেয়ে এলাকার সচেতন মহলের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেনম
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০০৭ সালে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের বেংগুলিয়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতি অত্র ইউপি রাস্তায় গাছ রোপণ করে। বেংগুলিয়া গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার বাড়ী হতে বুজরুক টেংরা গ্রামের বাকী হাজির বাড়ী পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে ২৪৭টি ইউকিপটার্স গাছ রোপন করা হয়। বিগত ১৬ বছরে গাছগুলো মূল্যবান হয়ে উঠে। ইউপি চেয়ারম্যান দুরভিসন্ধি মূলক মূল্যবান ওইসব গাছ বিক্রয়ের নিমিত্তে গত ২১/০৮/২০২২খ্রি. একটি দরপত্র আহবান করেন। গাছ কর্তন কমিটির আহবায়ক ও কিশোরগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক গত ৫ মাস আগে ১৮ সেপ্টেম্বর ২২ লোক দেখানো দায়সারা গোছের প্রচার বিহীন দরপত্র আহবানের মাধ্যমে নিলাম সম্পন্ন করেন। চেয়ারম্যানসহ তাঁর সহযোগীদের যোগসাজশে স্থানীয় চিহিৃতি কাঠ ব্যবসায়ির বিপরীতে গাছগুলোর নিলাম সম্পন্ন দেখানো হয়। চেয়ারম্যানের অনৈতিক পরামর্শ মোতাবেক কাঠ ব্যবসায়ি গ্রুপ তড়িঘড়ি রাতের আঁধারে গাছগুলো কেটে সাবাড় করে নিয়ে যায়। স্থানীয় সচেতন মহলের অভিমত গাছগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকার উর্দ্ধে। এক্ষেত্রে শুভঙ্করের ফাঁকির ন্যায় নামমাত্র ৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে নিলাম সম্পন্নের বিষয়টি সম্পূর্ণ শুভঙ্করের ফাঁকি। গাছ কর্তন কমিটির আহবায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিকসহ জড়িত সংশ্লিষ্টরা পরস্পর যোগসাজসে মূল্যের এহেন আকাশ-পাতাল তারতম্যের অবিশ্বাস্য কান্ডটি ঘটিয়েছেন।
অত্র ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে শুধু নামমাত্র মূল্যে গাছ বিক্রয়ের বিষয়টিই নহে। সময়ের ব্যবধানে একের পর এক অপ্রতিরোধ্য নানামুখী অনিয়ম-দূর্ণীতি-স্বেচ্ছাচারিতাসহ স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসির অভিযোগ তিনি তার জনপ্রতিনিধির কর্মক্ষেত্রে জনস্বার্থের বিষয়টি উপেক্ষা করে দুর্নীতিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সর্বোপরি চেয়ারম্যানের এসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ইউপি এলাকার সর্বস্তরের সচেতন মহল স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে দীর্ঘ সময়ধরে অত্র ইউপি কার্যালয় চত্ত্বর জুড়ে এক বিশাল মানববন্ধন করেন। ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গাছকাটাসহ আনীত অভিযোগ সমূহ সরেজমিন তদন্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে ইউনিয়ন বাসির অভিমত। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়নবাসীর পক্ষে প্রতিকার চেয়ে মো. শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিথনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যানের গাছ কর্তনসহ নানামুখী অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষ জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অপরদিকে; এরআগে ওই রাস্তার কর্তনকৃত গাছগুলোর রোপনকারী সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক উপকারভোগীদের পাওনা টাকা উদ্ধারে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর পৃথক অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে জানা যায়।
এদিকে; গাছ বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্করের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক ও মিথ্যাচারের সামিল বলে জানান। এসব অস্বীকার করে তিনি বলেন যতসব সরকারি নিয়ম, বিধি-বিধান মেনেই গাছের নিলাম ডাক সম্পন্ন করা হয়েছে। বনবিভাগের ফরেস্ট অফিসার কর্তনকৃত গাছগুলোর সরকারি মূল্য নির্ধারণ করেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে গাছগুলোর নিলামডাকে বিক্রয় করা হয় ৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। উপকারভোগি সমিতির ১২ সদস্যের কমিটির মধ্যে একক ব্যক্তি জনৈক রাজ্জাক ব্যক্তিগতভাবে উপকারভোগির টাকা একাই চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি টাকা হস্তগত করে আর কাউকে দিবেন না অভিযোগ পেলে বাকী ১১ জনের নিকট তাঁদের প্রাপ্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ইতোমধ্যেই নগদ পরিশোধিত হয়েছে। একটি চিহৃতি স্বার্থন্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে বরাবরই পরিকল্পিত হয়রানি করে আসছে। শেষকথা একটাই গাছ নিলাম সংক্রান্ত সামগ্রিক কার্যক্রমে কোথাও কোনরূপ অনিয়ম-অন্যায়-দুর্নীতি হয়নি বলে চেয়ারম্যান জানান। অভিযোগকারী মহলের প্রশ্ন ফরেস্ট অফিসার রহস্যজনক ভাবে পরিকল্পিত চেয়ারম্যান ও তাঁর নিজ স্বার্থ সংরক্ষণে সরকারি মূল্য এত কম নির্ধারণ করেছেন এবং ব্যাপক ঢোলশহরত প্রচার প্রচারনা করা হয়নি। বিষয়টি যাই-ই হোক না কেন? গাছগুলোর বর্তমান প্রকৃত বাজার মূল্য ১৫ লাখ টাকার উর্দ্ধে এমন এক প্রশ্নের উত্তরে চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক বিব্রতবোধসহ দায়সারা উত্তরসহ নিরব থাকেন।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান নয়নের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এলাকাবাসির লিখিত অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি। ওই ইউনিয়নের নির্দিষ্ট একটি লোকেশনে গাছ বিক্রয়ের অনুমতি মিলেছে। সেখানে উল্লেখিত সরকারি মূল্য বা দরের উর্দ্ধে নিলাম দরপত্র সম্পন্ন হয়েছে বলে আমি জানি। তদুপরি লোকেশন পরিবর্তন কিংবা ভিন্ন লোকেসহ কোনরুপ শুভঙ্করের ফাঁকি-চাতুরতা-মিথ্যাচার-অন্যায়-দুর্নীতি হয়ে থাকলে সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষ অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।