
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে বিএসএফের ধাওয়ায় নীলকমল নদে নিখোঁজ হওয়া দুই শিশুর লাশ ৭৮ ঘণ্টা পর ফেরত দিল ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা রাত ৭.৩৮ মিনিটে দীর্ঘ দু’দেশের আলোচনার পর সীমান্তের আন্তর্জাতিক পিলার ৯৩৮/৮ পিলারের ভারতীয় সেউটি-২ গ্রামের নারায়ন চন্দ্র রায়ের উঠানে শিশু পারভিন ও তার সহোদর সাকেবুল হাসানের লাশ তার বাবা রহিচ উদ্দিনের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এএসপি সার্কেল সুমন রেজা, ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুর রহমান, কাশিপুর ইউনিয়র পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মানিক, নেওয়াশী ইউপি সদস্য মেছের আলী, আজিজুল হক, লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি কাশিপুর কোম্পানী কমান্ডার ফরিদ উদ্দিন ভারতের পক্ষে ছিলেন স্থানীয় সরকারের ১২টি অঞ্চল প্রধান বিষ্ণু কুমার সরকারসহ ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। উল্লেখ্য গত শুক্রবার ভারতের দিল্লী থেকে পারভীন খাতুন (৮) ও সাকেবুল হাসান (৪) তার বাবা মায়ের সাথে কোরবানি ঈদ পালন করার জন্য চোরা পথে বাংলাদেশে ফিরছিল। এ সময় ভারতীয় দালালরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদেরকে সীমান্তে নিয়ে এসে এক বাড়িতে গোপনে রাখেন। ওই দিন মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক ৯৪৩নং মেইন পিলারের নিকট দিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার র্ধমপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করে দু’দেশের দালাল চক্র। মা বাবাসহ শিশুদ্বয়কে কাঁটাতার কেটে নীল কমল নদের তীরে নিয়ে আসে। এ সময় ডিউটিরত ভারতের শেউটি-১ ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে দেখার পর ধাওয়া করে। দালালরা তড়িঘরি করে নদ পাড় হওয়ার জন্য তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে। এ সময় বাবা রহিচ উদ্দিন মালপত্র নিয়ে নদীর মধ্যখানে চলে যান। তখন শিশু ভাইবোন মা ছামিনার কাছে থাকে। কিন্তু তারা কেউই সাঁতার না জানার কারণে রাতের অন্ধাকারে হাত থেকে ছুঁটে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশু পারভিন ও সাকেবুল।
বিএসএফের ধাওয়ায় নদে ডুবে যাওয়া ভাই-বোনের লাশ রোববার সকাল বেলা নদে তাদের লাশ স্থানীয়রা দেখে খবর দেয় বিজিবিকে। নদটি ভারতের ভুখন্ড হওয়ায় বিজিবি বিএসএফকে অবগত করে। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিজিবি-বিএসএফের কড়া পাহাড়ায় এক ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানা পুলিশ ও বিএসএফ মৃতদের লাশ উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দুই ভাই-বোন শিশু পারভিন ও সাকেবুল লাশ তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে।