গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পুলিশ হেফাজতে রিপন চন্দ্র দাস নামে এক আসামীর মৃত্যুর ঘটনায় সুন্দরগঞ্জ থানার ৪ পুলিশ সদস্যসহ১০ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা করা হয়েছে। নিহত রিপন চন্দ্র দাসের বাবা বাবলু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে রোববার দুপুরে পলাশবাড়ী আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলো- সুন্দরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রাজু আহম্মেদ, পুলিশ কনস্টেবল শাহানুর আলম, মোস্তাফিজুর রহমান, নার্গিস বেগম এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য মমতাজ উদ্দিন, সুরিশ চন্দ্র দাস, তার মেয়ে চম্পা রানী, আলম মিয়া, অমল চন্দ্র দাস ও রতন চন্দ্র দাস।
বাদী পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট সামিউল হক সামি জানান, আদালতের বিচারক মো. জয়নাল আবেদীন মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলা এজাহারে বাদি উলে¬খ করেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামের বাবলু চন্দ্র দাসের ছেলে রিপনের সঙ্গে প্রতিবেশি সুরেশ চন্দ্র দাসের মেয়ে চম্পা রাণীর মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো। গত ২৯ মে তারা দুজন বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বগুড়ার কাহালুতে ছেলের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠে। পরে সেখানে তাদের বিয়ে হয়। এ ঘটনায় চম্পার বাবা সুরিশ চন্দ্র দাস বাদি হয়ে অপহরণের অভিযোগ এনে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে সুন্দরগঞ্জ থানার এসআই রাজু আহমেদের নেতেৃত্বে স্থানীয় ইউপি সদস্য মমতাজ আলীসহ সঙ্গীয় পুলিশ গোপন খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১ জুন বগুড়ার কাহালুর থেকে চম্পাকে উদ্ধার ও রিপনকে গ্রেফতার করে। ওইদিনই তাদেরকে মাইক্রোবাসে করে কাহালু থেকে সুন্দরগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হচ্ছিল। পথে পুলিশ ইউপি সদস্য মমতাজ উদ্দিনের পরোক্ষ সহযোগিতায় রিপনকে মাইক্রোবাসে মারপিট করে হত্যা করে। পরে পলশাবাড়ী উপজেলা সদর সংলগ্ন গোপিনাথপুর জুনদহ এলাকায় রাস্তায় ফেলে দিয়ে দূর্ঘটনা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করে।
এঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রিপন বারবার পুলিশের কাছে প্রসাব করার জন্য কাকুতি মিনতি করছিলো। একপর্যায়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার জুনদহ এলাকায় মহাসড়কের পাশে মাইক্রোবাস থামিয়ে প্রসাব করার সুযোগ দিলে রিপন চন্দ্র দৌড়ে পালাতে গিয়ে দ্রুতগামী একটি ট্রাকের সাথে থাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। পরে তাকে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রিপনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পলাশবাড়ী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়।
ওই ঘটনার পর সুন্দরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রাজু আহম্মেদ, পুলিশ কনস্টেবল শাহানুর আলম, মোস্তাফিজার রহমান ও নার্গিস বেগমকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়। এছাড়া ঘটনাটি তদন্ত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যর একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। তদন্ত টিম এখন পর্যন্ত উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের রিপোর্ট দাখিল করেনি।