গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় কনের বাবা ও বিবাহ রেজিস্ট্রারের যোগসাজশে একটি বিয়ের দুইটি কাবিননামা তৈরির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাবিননামার একটিতে দেনমোহর ৫ লক্ষ এক টাকা এবং আরেকটি কাবিননামায় ১৮ লক্ষ ৫০ হাজার এক টাকা দেনমোহর দেখানো হয়েছে। বরের পিতা কর্তৃক বিবাহ রেজিস্ট্রার ও মেয়ের বাবার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মামলাসহ উভয় পক্ষে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের কালির খামার গ্রামের ফেরদৌসুর রহমানের পুত্র মেনাজ চৌধুরীর সাথে সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের গোপাল চরণ গ্রামের বাসিন্দা ও সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ ডিগ্রি কলেজের প্রফেসর আবু সোলায়মান ওরফে সাজা মিয়ার কন্যা শারমিন নাহার রিমি’র ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক গত ১৩/০৮/২০২০ ইং তারিখে ৫ লক্ষ এক টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে হয়। বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন স্থানীয় বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রার কাজী এম সাখাওয়াত হোসেন। কাবিন নামার বহি নং ৩০/১৯, তারিখ: ১৩/০৮/২০২০ ইং। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় দেয়া/নেয়ার সম্মতিতে বর মেনাজ চৌধুরী তার কর্মস্থল ঢাকায় চলে যায়। মেনাজ চৌধুরীর বাবা ফেরদৌসুর রহমান কাজী এম সাখাওয়াত হোসেনের কাছ থেকে কাবিন নামার অবিকল নকল কপি সংগ্রহ করে রাখেন।
এদিকে বর মেনাজ চৌধুরী ঢাকায় থাকা অবস্থায়ই অনিবার্য কারণে দুই পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। কনে শারমিন নাহার রিমি’র পিতা ধুরন্ধর প্রকৃতির ব্যক্তি সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ ডিগ্রি কলেজের প্রফেসর আবু সোলায়মান ওরফে সাজা মিয়া কর্তৃক বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রার কাজী এম সাখাওয়াত হোসেনের সাথে গোপনে আঁতাত করে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত কাবিন নামার সাক্ষীদের স্বাক্ষর জাল করে একই তারিখ দেখিয়ে আরেকটি কাবিন নামা সৃজন করে ১৮ লক্ষ ৫০ হাজার এক টাকা দেনমোহর দেখিয়ে উল্লেখিত কাবিন নামার নকল কপি সংগ্রহ করেন। উক্ত কাবিন নামার বালাম নং ২৯/১৯, তারিখ: ১৩/০৮/২০২০ ইং।
সুত্র জানায়, ধুরন্ধর আবু সোলায়মান সরকার ওরফে সাজা মিয়া উল্লেখিত জাল কাবিন নামার কপি দিয়ে গত ২১/১০/২০২০ ইং তারিখে সুন্দরগঞ্জের বিজ্ঞ আমলী আদালতে ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় ৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। যার সিআর- ৩৫০/২০২০(সুন্দর)। মামলা দায়ের করার খবর শুনে ফেরদৌসুর রহমান কাজী সাখাওয়াত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি উল্লেখিত জাল কাবিন নামা বাতিল করে দেয়ার কথা বলে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
সুত্র জানায়, গত ১৫/১১/২০২০ ইং তারিখে ফেরদৌসুর রহমান জাল কাবিন নামা বাতিল উপলক্ষে কাজী সাখাওয়াত হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। কিন্তু কাজী সাহেব উল্লেখিত জাল কাবিন নামা বাতিল না করে তিনি ওই জাল কাবিন নামার নকল কপি প্রদান করেন এবং পুনরায় দাবিকৃত বাকি দেড় লক্ষ টাকার দাবি করেন। কিন্তু ফেরদৌসুর রহমান বাকি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে কাজী সাখাওয়াত হোসেন তার ভাড়াটে গুন্ডা লেলিয়ে দেন এবং খুন জখম করার ভয় দেখিয়ে তাকে অফিস থেকে বের করে দেন। পরে নিরুপায় হয়ে ফেরদৌসুর রহমান বাদী হয়ে উল্লেখিত বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রার কাজী সাখাওয়াত হোসেন ও কনের বাবা সাজা মিয়া সহ ৬ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ১৩, তারিখ: ১৯/১২/২০২০ ইং।