গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে কিশোর অটোচালক দিলবরকে হত্যা ও ২৩ দিনের ব্যবধানে আবারো কিশোর অটোচালক জাহিদকে হত্যা চেষ্টাসহ ভ্যান ছিনতাইকাণ্ডের মূলহোতা মনোয়ার হোসেনকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে বৈরাগীহাট থানা পুলিশ। মনোয়ার পারইল দক্ষিণপাড়া (গনার) মমতাজ আলীর ছেলে। আটক অপর দুইজন চোরাই অটোভ্যান বিক্রির সহযোগি শাহপাড়া খলসী গ্রামের কাদের পুত্র মিন্নাছ আকন্দ (৩৮) ও একই গ্রামের স্বর্গীয় মহেন্দ্র মহন্তর ছেলে চন্দন মোহন্ত (৪৫)।
জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর রবিবার ইসলামপুর রাস্তাসংলগ্ন ধানক্ষেত হতে কিশোর অটো চালক দিলবরের ক্লুলেস লাশ উদ্ধার করে বৈরাগীহাট তদন্ত কেন্দ্র পুলিশ। তাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশি তদন্তে কোনো ক্লু উদ্ধার না হতে আবারো একই কায়দায় ৬ অক্টোবর জাহিদ নামের অপর এক কিশোরকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাত ৮টার দিকে রোয়াগাঁও-শাখাহার গ্রামের মাঝে সুযোগ বুঝে গলায় গামছা পেঁচিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রেখে অটোভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ভাগ্যক্রমে অল্প সময়ের মধ্যে জাহিদের জ্ঞান ফিরলে সে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া ভ্যানে পিছনে চিৎকার করে দৌড়াতে থাকে। খুরশাল মসজিদের কাছে আসলে তার চিৎকারে স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকার জনসাধারণ ছিনতাইকারী মনোয়ারকে ধাওয়া করে। অবস্থা বেগতিক দেখে রাস্তায় ভ্যান ছেড়ে সে ধানক্ষেত্রে লুকিয়ে পড়ে।
ঘটনাটি বৈরাগীহাট পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে জানানো হলে তারা আসামি ধরতে প্রযুক্তির ব্যবহার করে। টানা ২৪ ঘন্টা একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে অবশেষে ৭ অক্টোবর রাত ৭ টার দিকে কালাই থানা সীমান্ত হতে তাকে আটক করে। এ সময় তার নিকট হতে ভিকটিম জাহিদের মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর দায়েরকৃত মামলা নম্বর ১৪।
গ্রেফতার মনোয়ারকে গোবিন্দগঞ্জ থানায় নিয়ে এএসপি পলাশবাড়ী সার্কেলের নেতৃত্বে গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মেহেদী হাসান, ওসি তদন্ত আফজাল হোসেন, বৈরাগীহাট তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মিলন চ্যাটার্জী, এসআই সেকেন্দার ও এসআই বাবুলের সমন্বয়ে গঠিত দল রাতব্যাপী জিজ্ঞেসবাদ করে। জিজ্ঞেসাবাদের একপর্যায়ে ঘাতক মনোয়ার জাহিদকে হত্যাচেষ্টা ও নৃশংসভাবে নাবালক দিলবরকে হত্যাকরে অটো ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করে।
পরবর্তীতে মনোয়ারের বক্তব্য অনুযায়ী ছিনতাইকৃ অটো বিক্রয়ের সহযোগি তার খালাতো ভাই মিন্নাছ ও চন্দন মহন্তকে আটক করে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ। আসামীরা জিজ্ঞেসাবাদে জানায়, দিলবরকে হত্যা করার পরের দিন ঘাতক মনোয়ার অটোটি নিয়ে পীরগঞ্জ এলাকায় যাবার পথে কালিতলা এলাকায় চার্জ শেষ হয়। তখন মনোয়ার আসামি মিন্নাছকে বিষয়টি জানালে মিন্নাছ অপর অটো চালক চন্দনের ভ্যানের সহযোগিতায় অটোটি নিয়ে কালিতলা এলাকায় পৌঁছে। তারা তিনজনে অটোটি নিয়ে পীরগঞ্জ থানাধীন সয়েকপুর গ্রামের চোরাই অটো বিক্রেতা আমিনুলের নিকট হস্তান্তর করে ৭ হাজার টাকা গ্রহণ করে।
আটক আসামীদের তথ্যের ভিত্তিতে ৭ অক্টোবর রাতেই অভিযান চালিয়ে পীরগঞ্জ এলাকা হতে দিলবরকে খুন করে ছিনিয়ে নেয়া অটোরিক্সাটি উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার ৮ অক্টোবর আসামি মনোয়ার, মিন্নাছ ও চন্দনরা গোবিন্দগঞ্জ চৌকি আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব পার্থ ভদ্র’র নিকট ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।