
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ভাই মঞ্জুর আহমদের নামে গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটের বাড়িটির মিউটিশন (নাম জারি) ও ডিক্রি জারি করতে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে দেয়া আপিল বিভাগের রায় রিভিউ আবেদন আজ খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আনা পিটিশন আজ পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ বেঞ্চ।
গুলশানের এই বাড়িতে গত তিন দশক ধরে বসবাস করছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আদালতের আদেশের পর মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের জানান, এই বাড়িটি আমার জীবনের নানা ম্মৃতির সঙ্গে জড়িত। বাড়ি ছাড়া বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এখনি বাড়ি ছাড়ছি না। এছাড়া আদালতও সরকারকে বাড়ির দখল স্বত্ব দেয়নি। আমি এখন বাড়ির মূল মালিকের সঙ্গে বোঝাপড়া করব। যদি সরকার আমাকে বাড়ি ছাড়তে বলে আমি আইনগত লড়াই চালিয়ে যাব।
এদিকে, এ বাড়ির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা বাতিল করে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে তাও আজ বহাল রাখা হয়েছে।
আদালতে মওদুদ আহমদের পক্ষে তিনি নিজে ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দীন মাহমুদ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
গত ৩১ মে রিভিউ’র ওপর শুনানি শেষে আজ আদেশের জন্য বিষয়টি ধার্য ছিলো।
গত ২ আগস্ট ২০১৬ রাজধানীর গুলশানের একটি বাড়ি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টর মওদুদ আহমদের ভাই মঞ্জুর আহমেদের নামে মিউটেশন (নামজারি) করার জন্য দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের করা আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এই বাড়ি নিয়ে মওদুদ আহমেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাটিও বাতিল করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার জন্য হাইকোর্ট রায় দেয়। রাজউক এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করে। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউককে আপিলের অনুমতি দেয়।
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাড়িটি নিয়ে দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলায় অবৈধভাবে বাড়ি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেয় বিচারিক আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ হাইকোর্টে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ২৩ জুন দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ আমলে নিয়ে বিশেষ জজ আদালতের আদেশ বৈধ বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।
দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাড়ি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বিচারিক আদালত ২০১৪ সালের ১৪ জুন অভিযোগ আমলে নেয়। ওই অভিযোগ আমলে নেয়া সংক্রান্ত আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন মওদুদ আহমেদ। আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছিল। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিষয়টি খারিজ করে রায় দেয় আদালত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে মওদুদ আহমদ। তা মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ।
উল্লেখ্য, গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটের প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। এক পর্যায়ে বাড়িটির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের স্ত্রীরও নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা বাংলাদেশ ত্যাগ করলে ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ আহমদ তার ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মনজুরের নামে একটি আমমোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেয়।সূত্র- বাসস