
প্রায় ১০ বছর আগে রাজধানীর মিরপুরের গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সংস্থাটিকে ৭ দফা নির্দেশনা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোট।
আজ বুধবার (২৪ জুন) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেন।
রায় প্রকাশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন খাদিজা নির্যাতনের ঘটনায় রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম।
তিনি জানিয়েছেন, ৩১ পৃষ্ঠার পূণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। রায়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এছাড়া রায় ঘোষণার পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজার নির্যাতনের শুনানি করে ক্ষতিপূরণ বা যেকোনও সুপারিশ করতে কমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় কমিশন চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং কমিশন দায়িত্ব নিয়ে জেগে জেগে ঘুমোচ্ছে বলেও রায় ঘোষণার সময় মন্তব্য করেছেন আদালত।
ঘোষিত রায়ে বলা হয়েছে, মানবাধিকার কমিশন আইনে অর্পিত তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। গৃহকর্মী খাদিজা নির্যাতনের মতো মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মানবাধিকার কমিশন যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে পরিষ্কার যে, কমিশন তার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ/সচেতন নয়। এছাড়াও দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনে প্রতিকার দিতে কমিশন আইনে অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলার পরিচয় দিয়েছে।
মানবাধিকার কমিশনের প্রতি হাইকোর্টের ৭ নির্দেশনা:
১. খাদিজা নির্যাতন মামলার অভিযোগে কমিশন মানবাধিকার রক্ষায় ও প্রতিকার দিতে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ এবং আইনি অবহেলার পরিচয় দিয়েছে।
২. কমিশন যেভাবে আদেশ দিয়েছে তাতে কোনোভাবেই পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না যে, এই আদেশগুলো কমিশনের আদেশ নাকি কোনও সদস্যের আদেশ। কোনও সদস্য এরূপ আদেশ আদৌ দিতে পারে কিনা। মানবাধিকার কমিশন আইনের ১১(৩) এবং ২৮ ধারার বিধানে এ ধরনের আদেশের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ।
৩. কমিশনকে এই মর্মে নির্দেশনা দেয়া যাচ্ছে যে, কমিশন যেন সঠিক বিধি মেনে সদস্য বা সদস্যবৃন্দের পূর্ণ নাম উল্লেখ করে আদেশ পাস করে এবং আদেশ নকল কপি যেন ভুক্তভোগী পেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. কমিশন যে খসড়া বিধমালাটি তৈরি করে রেখেছে তা অতি দ্রুত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করে গেজেটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে।
৫. আইনের ১৬ ও ১৮ ধারার বিধান অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অনুসন্ধান বা ক্ষেত্রমতো তদন্ত করে যথাযথ সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
৬. কোনও সরকারি কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তা কমিশনের আদেশ-নির্দেশ বিবেচনা না করলে বা অবহেলা করলে সংবিধানের ১০২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের নিকট আবেদন করার জন্য কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
৭. কমিশন আইনগতভাবে একটি আধা-বিচারিক কর্তৃপক্ষ। সুতরাং, ইহা অবশ্যই ন্যায়বিচারের সকল নীতি মেনে চলতে বাধ্য। অত্র রায় প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে খাদিজা নির্যাতনের বিষয়ে শুনানি সম্পন্ন করে কী প্রতিকার, ক্ষতিপূরণের সুপারিশ বা অন্য যেসব সুপারিশ প্রস্তাব করা যায়, তা করতে কমিশনকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। যদি শুনানিতে খাদিজার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আইনের ১৯ নম্বর ধারার বিধান মতে খাদিজা বরাবর যথাযথ ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করবে কমিশন।
প্রসঙ্গত: ২০১০ সালে রাজধানীর মিরপুরে গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় তখনই জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠিন চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু এরপর ৫ বছর কেটে গেলেও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের শুনানি শেষেই আজ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করলেন হাইকোর্ট।