এক টুকরো জমি তো দূরে থাক, তাদের থাকার জায়গাই ছিলনা। নিঃস্ব ভূমিহীন সেই মানুষগুলোই এখন স্বপ্ন দেখছে সুন্দর ভাবে বাঁচার। মানুষের মতো বেঁচে থাকার। সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে তারা এখন পেয়েছে একটি নিজস্ব ঘর। একটু আশা। জেলার ৩০ হাজার ৩১২ টি ভূমিহীন পরিবারের জীবন পাল্টে দিয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্প।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ভেন্ডারপারা এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীন ২৬০টি পরিবারকে একটি করে ঘর দিয়েছে সরকার। পাকা মেঝে ও দেয়াল ঘেরা টিনশেড একটি লম্বা ঘরে অনায়াসেই বাস করতে পারে ছোট একটি পরিবার। প্রতি দশটি পরিবারের জন্য একটি টিউবওয়েল, পাঁচটি পরিবারের জন্য একটি স্যানিটারি ল্যাট্রিন এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও আছে এই প্রকল্প এলাকায়।
জো¯œা বেগম (৪০)। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর পেয়েছেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও কাটাখালি এলাকার এক গাছের নিচেই ছিল আমাদের ঘর। এক কথায় আমরা ছিলাম যাযাবরের মত। এখন আমাদের একটা নিজের ঠিকানা হয়েছে। স্বামী রিকশা ভ্যান চালিয়ে যা পায় তাতে তিন জনের সংসার ভালোভাবেই চলে যায়।
কষ্টের দিনগুলো মনে করে জ্যো¯œা বেগমের কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। তিনি বলেন, সেসব কষ্টের দিন গেছে আমাদের। আজ এখানে তো কাল ওখানে। স্বামীরও তেমন কোন আয় ছিল না। খেয়ে না খেয়েই চলত আমাদের সংসার। সবচেয়ে বেশী কষ্ট হত প্রাত্যহিক কাজের সময়। সে যে কী লজ্জায় পড়তাম বলে বুঝানো যাবে না এখন আর সেসবের ভাবনা নেই। নিজেদের একটা ঠিকানা হয়েছে এই যথেষ্ট। এজন্য সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
একই এলাকার বাসিন্দা পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী মো. বিল্লাল ছানা। পেশায় কৃষক। কিন্তু থাকার নিশ্চয়তাটুকু পেয়ে তার স্বপ্নও বদলেছে। তিনি বলেন, আমরা কয়েকজনে মিলে সমবায় ভিত্তিতে মাছ চাষ এবং সব্জি চাষ করি। এখন আমার দুই বাচ্চা ভেন্ডারপারা (আশ্রয়ন প্রকল্প) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়।
তিনি বলেন, প্রকল্পের ভেতরে চারটি পুকুর আছে। আমরা সেসব পুকুরে সমবায় ভিত্তিতে মাছ চাষ করি। এছাড়াও কিছু সব্জি চাষ করি। এখানে জায়গা পাওয়ায় আমরা সবাই সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আরেকটু ভালোভাবে বাঁচার জন্য চাই কাজের সুযোগ। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রত্যেক পরিবারের জন্য চাষাবাদের জমি বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন জানান। তিনি বলেন, যদি কিছু জমি পাওয়া যায়, সেখানে চাষাবাদ করে আমরা অর্থনৈতিকভাবে আরো স্বাবলম্বী হতে পারব। সে আয় থেকে আমাদের ঘর-বাড়িও মেরামত করতে পারব।
জাকিয়া বেগম (৩৫) বলেন, আমরা এখানে সমবায় ভিত্তিতে সব্জি চাষ এবং হাঁস-মুরগী পালন করি। এখানে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানিরও কোন অভাব নেই। প্রকল্পের পক্ষ থেকে প্রতি দশটি পরিবারের জন্য একটি করে টিউবওয়েল দেয়া হয়েছে।
শুকজান বিবি বলেন, আগে আমি আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে নদীর তীরে থাকতাম। খুব কষ্টে আমাদের দিন কাটত। এখন আর সেসব দিনের মত কোন চিন্তা নেই। এখন আমার সব ছেলেমেয়েই স্কুলে যায়। বাড়িতেও পড়ালেখার কোন অসুবিধা হয় না। এখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থাও আছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করেন।
ভেন্ডারপারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, মূলত ভূমিহীন, অতি দরিদ্র এবং আশ্রয়হীনরাই এসব আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গা পেয়েছে। তিনি এই আশ্রয় কেন্দ্রটি মেরামত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
খুলনার ডেপুটি কমিশনার মো. আমিন উল আহসান বলেন, বর্তমান সরকারের সময় জেলার নয়টি উপজেলায় সর্বমোট ৪১ টি আশ্রয়ন প্রকল্প করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের আওতায় ৩০ হাজার ৩১২ টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের সরকার শুধুমাত্র থাকার সুযোগই সৃষ্টি করেনি, তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ, স্বাস্থ্য সেবা, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থাও করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশটি বিশেষ উদ্যোগের একটি হচ্ছে আশ্রয়ন প্রকল্প। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালে প্রথম এই প্রকল্প হাতে নেয়। মূলত সেসময় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গৃহহীন হয়ে যাওয়া সেন্ট মার্টিন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই আশ্রয়ন প্রকল্পটি। পরবর্তীতে ভূমিহীন ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এ আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা নির্মাণ করা হয়।সূত্র- বাসস