
নরসিংদী যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন। এরই মধ্যে তার মোবাইল কললিস্ট পরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক এমপির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ পরিচয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রভাবশালীদের নাম-পরিচয় ব্যবহার করতেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত এই নেত্রী। পাপিয়াকে সহায়তা দেয়ার তালিকায় রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তাও। তাদের মধ্যে যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করেছেন পাপিয়া।
পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়কোবাদ কাজী বলেন, তিনি যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল এবং যুব মহিলা লীগ ঢাকা উত্তরের সভাপতি সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের নাম বলেছেন। সব অভিযোগ যাচাই করা যায়নি।
তুহিনের সঙ্গে পাপিয়ার চ্যাটিংয়েও এ বিষয়ক তথ্য উঠে এসেছে। এ ছাড়া যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই শীর্ষ নেত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার তথ্য রিমান্ডে উঠে এসেছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজন ভিকটিমকে পাপিয়ার মুখোমুখি করা হয়। পাপিয়া তাদের সঙ্গে প্রতারণা করার কথা স্বীকার করেন।
যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ও সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, সাংগঠনিক সম্পর্কের বাইরে পাপিয়ার সঙ্গে আমার অন্য কোনো সম্পর্ক ছিল না। রাজনীতির কারণেই আমাকে তার সঙ্গে মিশতে হয়েছে।
তুহিন বলেন, পরিচয়ের পরে সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফোনে কথা হয়। আবার মেসেঞ্জারে চ্যাটিংও হয়। সংগঠনের জেলা নেত্রী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে তার মধ্যে এমন কুৎসিত কিছু রয়েছে তা জানা ছিল না।
পাপিয়ার সঙ্গে গাড়ির ব্যবসা থাকার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। প্রয়োজনে ওর সামনে আমাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুক।
তুহিন আরও বলেন, যাচাই-বাছাই না করে সরল বিশ্বাসে মিশেছি, এটাই আমার দোষ। সে অনেক আগে আমার বাসায় আসত। একবার পাপিয়াকে শাড়ি উপহার দিয়েছিলাম। সংগঠনের নেত্রী হিসেবে সেটা দিতেই পারি। সে একবার আমার কাছে টাকা ঋণ চায়। তবে ওই সময় টাকা না থাকায় দিতে পারিনি। যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ার পর মনে করেছি টাকা ধার না দেয়ায় হয়তো আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে নিয়োজিত সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, নরসিংদীর একজন এমপির সঙ্গেও পাপিয়ার ভালো সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রভাবশালীর মাধ্যমেই নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈধ-অবৈধ গ্যাস সংযোগ এবং লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়ে আসছিলেন তিনি। নিজে নিয়মিত মাদক সেবন করতেন।
সূত্র জানায়, একটি সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা পাপিয়া পাঁচ বছরে কয়েক কোটি টাকা ও বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। তাকে রাজধানী ও নরসিংদীতে মাদক-বাণিজ্যে সহায়তা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।
সূত্র জানায়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হওয়ার চেষ্টায় বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করেন পাপিয়া। কিন্তু যারা এ দায়িত্ব নিয়েছিলেন তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাপিয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করতে সাহস পাননি। এ কারণে ওই বিনিয়োগটি বিফলে যায়।
পাপিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আকতার বলেন, জেলা কমিটিতে পাপিয়া আগে কোনো পদে না থাকলেও তাকে পদ দিতে অনেকটা বাধ্য হয়েছিলাম। নরসিংদীর একটি পক্ষ পাপিয়াকে পদ না দেয়ার জন্য আমাদের বলেছিল। আমিও পাপিয়াকে পদ দেয়ার পক্ষে ছিলাম না। তারপরও শেষ পর্যন্ত দিতে হয়েছে। বাণিজ্য করে যারা পাপিয়াকে পদ দিয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। এমন মেয়েদের জন্য যুব মহিলা লীগের সম্মান যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাপিয়া কাদের সঙ্গে উঠাবসা করে, তাদের খুঁজে বের করলেই সব পেয়ে যাবেন। অনেকের সঙ্গেই পাপিয়ার ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল, তাদের বের করুন।