
জামায়াতে ইসলামীর নতুন নির্বাচিত আমির হিসেবে ২০২০-২০২২ কার্যকালের জন্য শপথ নিয়েছেন ডা. শফিকুর রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর একটি মিলনায়তনে শপথ নেন জামায়াতের নতুন আমির।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদ্য সাবেক আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মিয়া গোলাম পরওয়ার, নির্বাহী পরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মাওলানা আবদুল হালিম, নুরুল ইসলাম বুলবুল, সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক তাসনীম আলম প্রমুখ।
জানা যায়, ডা. শফিকুর রহমান ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। জামায়াতের নতুন আমির ছাত্রজীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সিলেট শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য হন। ডা. শফিক ১৯৮৬ থেকে ’৮৮ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা শাখা জামায়াতের সেক্রেটারি ও ১৯৮৯ থেকে ’৯১ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এবং ১৯৯১ থেকে ’৯৮ পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের আমির, ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিলেট মহানগরী জামায়াতের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মনোনীত হন। ২০১০ সাল থেকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, ২০১১ থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হন। ২০১৭ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছিলেন। শফিকুর রহমানের স্ত্রী ডা. আমিনা শফিক অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন।
শপথ নিয়েই ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে। পাশাপাশি স্মরণ করছি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকেও।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি প্রফেসর গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাসেম আলীকে, যারা ইসলামের সুমহান আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে আজীবন চেষ্টা করে গেছেন।
ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, বিজয়ের এই মাসে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সব শহীদ ও সম্মানিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের বীরত্ব, দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
বিদায়ী আমির মকবুল আহমাদের অবদান স্বীকার করে নতুন আমির বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি মকবুল আহমাদের প্রতি, যিনি এক কঠিন ক্রান্তিকালে আমিরে জামায়াত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আজীবন আমাদের হৃদয়ে অভিভাবক হিসেবে থাকবেন।
শফিকুর রহমান বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন নজিরবিহীনভাবে একযোগে মহড়া দিয়ে মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। দেশপ্রেমিক জনগণের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো—গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার।
দেশের বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জামায়াতের নতুন আমির বলেন, দেশের মানুষের আশা-ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের অবস্থা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
দুর্বল পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে বলে অভিযোগ করে শফিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এ সমস্যার আশু সমাধানের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু ভারত অন্যায়ভাবে সে দেশের লোকদের সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশ-ইন করছে। এতে বাংলাদেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন।