
কমিশনের সুপারিশ সরকার অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট কমিশন আইন ও সংবিধান অনুসারে তা হাইকোর্টের নজরে আনাসহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতি সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মিরপুরের গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা রিটের ওপর আজ সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নির্দেশনাসহ এ মামলার রায় দেন।
নির্দেশনাগুলো হলো:
১. মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে যে খসড়া বিধিমালা তৈরি করেছে সেই বিধিমালাটি সুশীল সমাজের পরামর্শ নিয়ে যথোপযুক্ত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
২. কমিশনকে আইনের ১৬ ধারা অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ১৬ ধারা অনুসারে কমিশন দেওয়ানি আদালতের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এবং তদন্ত বা অনুসন্ধানের স্বার্থে সাক্ষীকে তলব, নথি তলব বা জামিনযোগ্য পরোয়ানাও ইস্যু করতে পারে।
৩. যদি কমিশনের কোনো সুপারিশ সরকার মান্য না করে তাহলে সংশ্লিষ্ট কমিশন আইনের ১৯ ধারা এবং সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হাইকোর্টের নজরে আনতে হবে।
৪. কমিশন থেকে যেসব আদেশ দেওয়া হয় সেসব আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি ৩০ দিনের মধ্যে ইস্যু করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে কমিশনকে তাদের পদ্ধতিগুলো নির্ধারণ করে নিতে হবে।
৫. কমিশনে কোনো অভিযোগ আসার পর তা যেন একজন ব্যক্তির স্বার্থে নিষ্পত্তি বা আদেশ দেওয়া না হয়। কমিশন আইনের ১১(৩) বা ২৮ ধারার নিয়ম অনুসারে যথাযথ ক্ষমতা প্রয়োগ করে আদেশ প্রদানকারীদের নাম ও পরিচয় লিখতে হবে।
৬. মানবাধিকার কমিশন যেহেতু একটি আধাবিচারিক কর্তৃপক্ষ সেহেতু কমিশন যে আদেশ দেবে, প্রত্যোকটি আদেশের পেছনেই যথাযথ কারণ উল্লেখ করতে হবে যাতে ন্যায় বিচারের পরিপন্থী না হয়।
৭. খাদিজার বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনকে ৬০ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ সময়ে খাদিজা ও পরিবারের বক্তব্য শুনে খাদিজার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে কমিশনের ১৯ ধারা অনুসারে অন্তবর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে সুপারিশ করতে হবে।
পরে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, রায় ঘোষণাকালে আদালত বলেছেন, এতদিনে হয়ত পুলিশ খাদিজার পরিবারকে পক্ষপাতদুষ্ট করে ফেলেছে, যেটা প্রতিবেদনে দেখা গেছে। ওই প্রতিবেদনে খাদিজার কোন অভিযোগ নেই এবং তার বাবা সংক্ষুব্ধ নন।
এ কারণে আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, পাঁচ বছর পরে একজন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বসে থাকবে না। পুলিশ ইতিমধ্যে তাদের পক্ষপাতদুষ্ট করে ফেলেছে।
এরপরও যেহেতু বিষয়টি মানবাধিকার কমিশনে গিয়েছে, তাই কমিশনের এখনও অনেক কিছু করণীয় আছে। তাই কমিশনকে খাদিজার অভিযোগ পর্যালোচনা করে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারকে সুপারিশ করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে রাজধানীর মিরপুরে গৃহকর্মী খাদিজাকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠি দেয়া হয়। এরপর পাঁচ বছর কেটে গেলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।