
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার যুদ্ধে, দেশের মাটি, পানি রক্ষার যুদ্ধে ‘প্রথম শহীদ’ আবরার ফাহাদ। সেজন্য ফেনী নদীর নাম হোক-‘আবরার নদ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, আব্দুস সালাম আজাদ, সহ দফতর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, ফেসবুকে দেশবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেওয়ার অপরাধে নারকীয় কায়দায় রাতভর নির্যাতন চালিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা খুন করেছে বুয়েটের সোনার টুকরা মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে। ফাহাদের মতো নিরীহ মেধাবী ছাত্রকে হত্যার মাধ্যমে ছাত্রলীগ প্রমাণ করেছে যে, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নেই।
‘ছাত্রলীগের খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে জিম্মি। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরবে না। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না।’
তিনি বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় সোমবার রাতে চকবাজার থানায় যে মামলা হয়েছে সেখানে আসামি হিসেবে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। রহস্যজনকভাবে ১৯ জনের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্তের নাম নেই। শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুম তথা টর্চার সেলটি কার? তাকে বাঁচাতে বুয়েট প্রশাসন উঠে পড়ে লেগেছে।
‘বুয়েট প্রশাসন এই হত্যাকাণ্ডকে সামান্য অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু বলে বিবৃতি দিয়েছে। তারা খুনিদের আড়াল করতে সিসিটিভিতে ধারণ করা ২০ মিনিটের ভিডিও এডিট করে মাত্র দেড় মিনিটের একটি ক্লিপ দিয়েছে আন্দোলনরত ছাত্রদের।’
তিনি আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রকৃত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এই ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, যাতে আর কোনো মায়ের কোল শুন্য না হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তির প্রতিবাদে ধাপে ধাপে বিএনপির পক্ষ থেকে রাজপথে কর্মসূচি দেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, রোববার রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, ওই রাতেই হলটির ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।
সোমবার সন্ধ্যায় আবরারের বাবা ব্র্যাকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বরকতুল্লাহ রাজধানীর চকবাজার থানায় ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলার বাকি ৯ জন আসামিকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।