এ তোর আব্বা কী করে? তোর আব্বারে ভিসি বানাই দি (বানিয়ে দিই)। দেখি তোর বাবা বিশ্ববিদ্যালয় কেমন চালায়। কী আগুন জ্বালাবি এ জানায়োর। এ… কী আগুন জ্বালাবি, কেন জ্বালাবি, কোন কোন জায়গা জ্বালায় আইছিস (এসেছিস)। তোরে তো এখন লাথি দিয়ে বের করে দিতে ইচ্ছা করতিছে (করছে)। এ কোনডারে (কাকে) ছাড়বেন। এর একটা থেকে আরেকটা বেশি। এদের কথা শুনলি (শুনলে) মরা মানুষ তাজা হয়ে যাবে…।’
কয়েক শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে এভাবেই গালমন্দ করছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।
পাশে বসে কোন শিক্ষার্থী ফেসবুকে কী স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তা পড়ে শোনাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভূইয়া। শুধু ওইসব শিক্ষার্থীকেই নয়, তাদের বাবা-মাকে ডেকে এনেও শোনানো হয়েছে কটু কথা। অপমান করা হয়েছে। এমন এক অডিও ক্লিপস গতকাল ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
প্রক্টর এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ছিলেন, ‘স্যার ও লিখেছে প্রতিবাদ করলে বহিষ্কার করবে তো? করুক, কয়জনকে বহিষ্কার করবে। আমরা তো অন্যায় কিছু করিনি।’ এ কথা শুনে উপাচার্য বললেন, ‘তয় তুরা (তোরা) চালা আইসা (এসে) ইনভারসিটি (ইউনিভার্সিটি)। তোর বাপরা আইসা, মায়েরা আইসা চালাক। আমরা ছাইড়া (ছেড়ে) দি (দেই)। এ যা বাইর (বের হ), যা বের হয়।’ এ সময় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বারবার ক্ষমা চাইছিলেন। তাতেও থামছেন না উপাচার্য নাসির।
‘তোর আব্বারে আইনা (এনে) চালা। তোর আব্বা বানাইছে বিল্ডিং? ১০৩ রুম কারে দেব, তোর কাছে শোনব? তোর কাছে শোনব, না তোর মার কাছে শোনব। ১০৩ নম্বর নিয়ে তোর এতো হেডেক ক্যান। ওই রুমডা (রুমটা) কি তোর আব্বার?’ এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছিল এক শিক্ষার্থীর মায়ের কান্নাজড়িত কণ্ঠে সন্তানকে ক্ষমা করে দেওয়ার আকুতি। আবার উপাচার্য বলছেন, ‘এ আপনার ছেলে কোনডা (কোনটা)? কী করেন আপনি? ও শিক্ষক আপনি? আপনার ছেলে লেখছে কিন্ডারগার্টেন এটা।
কিন্ডারগার্টেনে আপনার ছেলেকে ভর্তি করছেন কেন? এ কিসের জন্যি কিন্ডারগার্টেন লেখছিস? লাথি দিয়ে তোরে ফেলে দেব এই জায়গা থেকে। এ জানোয়ার। তোর চৌদ্দ পুরুষের সাধ্য ছেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তুই তো জীবনেও চান্স পাতি না। আমি এ বিভাগ খুলছিলাম বলে তুই চান্স পাইছিলি। কোন বিশ্ববিদ্যাল থেকে এ জায়গায় কী কী খারাপ তুই ক। তোর শাস্তি অবেই (হবেই)। সবাই যদি কয় কেজিতি পড়ি। তলিতো আমি ভিসি থাকি না। আমি তো হেডমাস্টার হইয়া যাই।’
উপাচার্য ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দীনকে অপসারণের দাবিতে বেশ কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত পেটোয়া বাহিনীর হামলার পর আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে ওঠে। দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি, ভর্তি বাণিজ্য, ক্যাম্পাসে বিউটি পার্লার দিয়ে ব্যবসা করাসহ নানা অভিযোগ উপাচার্যের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, অবিলম্বে এই অযোগ্য উপাচার্যকে অপসারণ করে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল মানববন্ধন করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। তারা বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।