
শুধু ভিনদেশি তরণ-তরুণীই নয়, পেটের দায়ে অথবা বিলাসী জীবন-যাপনের জন্য এই চক্রে জড়িয়ে পড়েছেন শিক্ষিত বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরাও। রাজধানীর নামিদামী ক্লাবগুলোতে একের পর এক অভিযানে বিপাকে পড়েছেন এসব ক্যাসিনো গার্লরা।
প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে অধিকাংশই এখন না যেতে পারছেন নিজ দেশে, ভিসার মেয়াদ না থাকায় থাকতেও পারছেন না বাংলাদেশে। অজানা আতঙ্ক ভর করেছে তাদের মধ্যে।
জানা গেছে, ক্যাসিনোয় কাজ করতেন চীন ও নেপালের অন্তত ৪০০ প্রশিক্ষিত তরুণ-তরুণী। তারা মূলত বেতনভোগী। ট্যুরিস্ট ভিসায় আসা এসব তরুণ-তরুণীর প্রত্যেকেই সুশিক্ষিত; চেহারায় রয়েছে আভিজাত্যের ছাপ। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় পারদর্শী।
তাদের কেউ কাজ করতেন রিসেপশনে, কেউ ইলেকট্রনিক জুয়ার বোর্ড অপারেটিংয়ে, কেউ নিয়োজিত ছিলেন ক্যাসিনো থেকে অর্থ পাচার কাজে। ক্যাসিনোয় আসা জুয়াড়িদের মনোরঞ্জনের জন্য আনা সুন্দরী গার্লদের রাখা হতো রাজধানীর গুলশান, নিকেতন, বনানী, ধানম-ি, উত্তরা, পল্টন, ফকিরাপুল, শাহজাহানপুর ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার প্রাসাদোপম ভবনে।
তাদের আনা-নেওয়া করা হতো কালো কাচঘেরা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব গাড়িতে। নিরাপত্তা থেকে শুরু করে এসব গার্লের থাকা-খাওয়া, সাজসজ্জা সব কিছুই বহন করত সংশ্লিষ্ট ক্যাসিনো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান।
শুক্রবার ক্যাসিনোয় কাজ করা কয়েকজন তরুণ-তরুণীর সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তেও ক্যাসিনোর কর্মচারীদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।
গত বুধবার বিকালে ফকিরেরপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোয় অভিযানকালে কর্মরত কয়েকজন চীনা ও নেপালি নাগরিককে আটক করে র্যাব। তাদের কারোরই ওয়ার্ক পারমিট নেই। আটকদের মধ্যে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরা দুই তরুণীও ছিলেন। কাপড় পাল্টে থ্রিপিস পরতে চাইলে র্যাবের বাগড়ায় তারা বলেন, ‘পেটের তাগিদে জুয়ার বোর্ডে চাকরি করি, স্যার। আমাদের থ্রিপিসটা পরতে দেন। ওয়েস্টার্ন ড্রেস না পরলে চাকরি থাকবে না।’
নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে নেপালের এক গার্ল জানান, ইয়ংমেন্স ক্লাবে দেড় মাস ধরে চাকরি করছিলেন। দৈনিক দুই শিফটে ১২ ঘণ্টা অন্তর মোট ১২ জন গার্ল কাজ করেন। ক্যাসিনোয় তাদের ‘ডিলার’ নামে সম্বোধন করা হয়। মাসিক ও দিন হিসেবে কখনো রিসেপশনে, কখনো বোর্ডে কার্ড সরবরাহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। রিসেপশনিস্টের বেতন ২১ হাজার আর কার্ড বিতরণকারীকে বেতন দেওয়া হতো ১০ হাজার টাকা।
তাদের স্বামী এ কাজের বিষয়ে জানলেও স্বজনরা জানত না। তিনি আরও জানান, ক্যাসিনোয় সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা এবং রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত জুয়া খেলা হয়। জুয়ার বোর্ডগুলো চালু করে চীনা নাগরিকরা।
বোর্ড পরিচালনা করে নেপালিরা। দিনের প্রতি শিফটে ৭০-৮০ জন মানুষ খেললেও রাতের বেলায় বেশি মানুষের সমাগম হয়। ক্যাসিনোয় অনেকে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক সেবন করে বলেও জানান তিনি।
আয়োজকরা ইয়াবা-মদের আসরের ব্যবস্থাও রেখেছিলেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিত্তশালী পরিবারের তরুণরাও এখানে আসত। বড় জুয়াড়িদের প্রথমে সম্ভাষণ করা হয় মদের গ্লাস দিয়ে। বাহারি খাবারের আয়োজন থাকলেও সবই মেলে বিনাপয়সায়। তিনি আরও জানান, জুয়া পরিচালনার জন্য নেপালসহ পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েক দেশের তরুণীরা কাজ করেন। ভিজিট ভিসায় আসা তরুণীদের বেশিরভাগই নেপালি। লাখ টাকার বেশি অগ্রিম দিয়ে তাদের বিদেশ থেকে আনা হয়। বেতন ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।