
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গত মাসে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে হামলা চালিয়ে মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালানোর এক ঘণ্টা পর বিশ্বের প্রচলিত প্রধান চার ধর্মের প্রতিনিধিরা যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামের কেন্দ্রীয় মসজিদে একত্রিত হন এবং মুসলিমদের প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশ করেন।
ইহুদি অর্থোডক্স রাব্বি বা ইহুদি ধর্ম গুরু ইওসি জ্যাকবস বলেন, আমরা এই বলে প্রার্থনা করেছিলাম যে, ‘হে সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে আপনার ভালোবাসা দ্বারা আগলে রাখুন এবং আমাদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করুন।’
বার্মিংহামের এই মসজিদটির ইমাম শুধুমাত্র একজন ধর্মীয় নেতা হিসেবে কাজ করেন না বরং তিনি এখানকার স্থানীয় জন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্থানীয় শিশুরা এবং বয়স্ক মুসলিমরা মসজিদের ইমামের সাথে মিলে বার্মিংহাম শহরকে স্থিতিশীল এবং আনন্দময় রাখতে পেরে খুব খুশি।
একই সাথে তারা এটাও আশা করেন যে, অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা যাতে করে মুসলিমদের সাদরে গ্রহণ করে নেয় যা সকল মধ্যপন্থী মুসলিমই কামনা করে থাকেন।
বার্তা সংস্থা ফক্স নিউজের একজন বিশ্লেষক ২০১৫ সালে বলেছিলেন যে, বার্মিংহাম এমন একটি শহর যেখানে সকল ধর্মের লোকজন সহজে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু শহরটি মাঝে মধ্যে সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা নাসের মাহমুদ বলেন, ‘স্থানীয় পুলিশের জন্য অনুদান কমিয়ে দেয়া হয়েছে আর এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় ভীতির কারণ। কিছু সাধারণ অপরাধ এখানে ঘটে থাকে কিন্তু তা নিয়ে মুসলিমদের দোষারোপ করা হয়।’
শহরটির মুসলিম কমিউনিটির সদস্যরা জানিয়েছেন যে, তারা নিজেরাই অপরাধের সমস্যা এবং উগ্রপন্থা মোকাবেলা করতে পারবেন। উদাহরণ সরূপ বার্মিংহাম কেন্দ্রীয় মসজিদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আফজাল সিরিয়া যুদ্ধে যোগদানে আগ্রহী অনেক মুসলিমকে বুঝিয়ে এ পথ থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
বার্মিংহামের কেন্দ্রীয় মসজিদ একই সাথে স্থানীয় জনজীবনে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। প্রতি বছর কয়েক শত মুসলিম ইসলামিক পারিবারিক আইনের সাথে যুক্ত শরিয়া আইন অনুযায়ী বিভিন্ন সমাধানের জন্য আবেদন করেন এবং সে অনুযায়ী সমাধান পেয়ে থাকেন।
আমরা বোন যিনি বার্মিংহাম কেন্দ্রীয় মসজিদের একজন নেতা এবং তিনি যুক্তরাজ্যের একমাত্র নারী যিনি শরিয়া কাউন্সিলের সাথে যুক্ত আছেন। তিনি বলেন, একজন ধনী নারী ব্রিটিশ আইনে যে সমাধান পাবেন তার চাইতে অনেক গুন বেশি ভালো সমাধান ইসলামিক আইনে খুঁজে পাবেন।
বার্মিংহামের বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে স্থানীয় মুসলিমদের প্রতিবাদের সম্প্রতি উদাহরণ হচ্ছে শহরটির বিদ্যালয় সমূহের শ্রেণীকক্ষ সমূহ। বার্মিংহামের প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে সম-লিঙ্গের সাথে সম্পর্ক বা সমকামিতা সম্পর্কে পাঠদানের প্রতিবাদে মুসলিম অভিভাবকেরা ব্যাপক প্রতিবাদে অংশ নেন।
তাহির আলম নামের একজন মুসলিম শিক্ষাবিদ অভিভাবকদের এমন প্রতিবাদ কে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, স্থানীয় বিদ্যালয় সমূহকে ইসলামিক শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এমন অভিযোগে ২০১৫ সালে তাহির আলম কে বার্মিংহামের শিক্ষা প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা পদ্ধতি অবশ্যই কমিউনিটির সদস্যদের মতামতের দ্বারা প্রতিফলিত হতে হবে। আর সমকামিতা ইসলামে বৈধ নয়।’ তাহির আলম তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের পক্ষে বলতে গিয়ে বলেন, শহরের বিদ্যালয়ে আরো বেশি করে ইসলামি শিক্ষা দেয়া হলে তা এখানকার শিক্ষার্থীদের মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।
বার্মিংহামের এই সাংস্কৃতিক যুদ্ধ সেখানকার স্থানীয় রাজনীতিতে ফাটল ধরিয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী লেবার পার্টির কাউন্সিলর বিদ্যালয়ে সমকামিতার শিক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া মুসলিম অভিভাবকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
অন্যদিকে ধর্ম নিরপেক্ষ বাম পন্থী দল সমূহ বিদ্যালয়ে সমকামিতার পাঠ দেয়ার পক্ষে এবং তারা বিদ্যালয় সমূহকে সমর্থন দিয়েছে। তবে কনজারভেটিভ দলের এমন সমর্থন আপত দৃষ্টিতে প্রগতিশীল বলে মনে হলেও শহরের নিকটে ‘সমকামী গ্রাম’ তৈরীর উদ্যোগের ফলে শহরটির অর্থনীতি ধংশের মুখে পড়বে বলে স্থানীয়রা আশংকা করছেন।
বার্মিংহামে এভাবে অনেক কৃত্রিম গ্রাম তৈরী হয়েছে। এরকম কিছু কিছু গ্রাম বা স্থানে জাতিগত এবং সংস্কৃতি গত ভিন্নতা তৈরী হয়েছে যা শহরটির বাসিন্দাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরী করবে।
বার্মিংহামের কেন্দ্রীয় মসজিদ কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন যে, শহরটিতে বর্তমানে অনেক লোকজন বসবাস করেন যাদের চারিত্রিক সমস্যা বিদ্যমান এবং তা নিয়ে মুসলিম সমাজের মধ্যে দিন দিন ভীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ সকল স্থানে তারা অপ্রীতিকর ব্যবহারের মুখোমুখি হচ্ছেন।
আন্ত-ধর্মীয় একটি আলোচনায় এন্ড্রু স্মিথ নামের একজন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী বলেন, বার্মিংহামের জনগণকে পুনরায় একত্রিত করার জন্য তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বার্মিংহামের কেন্দ্রীয় মসজিদ এ বিষয়ে স্থানীয় ক্যাথলিক চার্চের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সকলেই নিউজিল্যান্ডের গণহত্যা দ্বারা এই সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, কমিউনিটির সকলের মধ্যে সহমর্মিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন।
সূত্র: ইকোনোমিস্ট ডট কম।