সংগঠনের এত বড় আয়োজন নিয়ে সভাপতি শোভনকে কিছু জানানো হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আয়োজনকে ঘিরে কোটি টাকারও বেশি বাণিজ্য করেছেন ছাত্রলীগের অন্য তিন শীর্ষ নেতা। এই কারণে শোভনের অনুসারীরা এই অগ্নিকাণ্ড ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন ছাত্রলীগের নেতারা।
গতকাল শুক্রবার (১২ এপ্রিল) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ফের ভাঙচুরের আশঙ্কায় বর্ষবরণ উপলক্ষে আয়োজিত কনসার্ট বাতিল করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মলচত্বরে পহেলা বৈশাখের আয়োজনের মঞ্চে দুই দফা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উদযাপনের লক্ষ্যে কোমল পানীয়র ব্র্যান্ড মোজোর সহযোগিতায় শনি ও রোববার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উদ্যোগে মল চত্বরে কনসার্ট ও মেলার আয়োজন করা হয়। এতে জেমস, মিলা, ওয়ারফেজ, আর্টসেল ও ফিড ব্যাকসহ বেশ কয়েকটি ব্যান্ডের সঙ্গীত পরিবেশনের কথা ছিল।
এই আয়োজনের মঞ্চ তৈরিসহ সামগ্রিক প্রস্তুতি গুছিয়ে আনার মধ্যেই শনিবার ভোররাতে অজ্ঞাত যুবকরা কনসার্টের মঞ্চে ভাংচুর এবং বিভিন্ন উপকরণে আগুন ধরিয়ে দেয়।
রাত ৩টায় মল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, কনসার্টের মূল মঞ্চ এলোমেলো, পাশে মেলার স্টলগুলো ভাঙা ও কিছু স্টলের তাঁবু উল্টে আছে, বেশ কয়েকটি ফ্রিজ ভেঙে পড়ে আছে। এছাড়া ব্যানার-ফেস্টুন ছেঁড়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়, এর কিছু আগুনে পোড়া।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত মোজোর মার্কেটিং বিভাগের অপারেশন হেড (ব্র্যান্ড) আজম বিন তারেক বলেন, রাত ১টার পর এই হামলা হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০-২৫ জনের একটি দল এসে গণ্ডগোল বাঁধাতে গেলে আমি তাদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করি। এর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আরও ১০০-১৫০ জন এসে আমাকেসহ আমার ওয়ার্কারদের বের করে দেয়। ১০-১২ মিনিটের মধ্যে পুরো জায়গায় ভাঙচুর চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়।
ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কিছুক্ষণ পর শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসাইন।
ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও সঠিকভাবে নিরূপন করা যায়নি। তবে ২০-২৫ লাখ টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী এই ঘটনার জন্য সভাপতি শোভনের অনুসারীদের দায়ী করে বলেন, তিনি (শোভন) ডাকসু নির্বাচনে পরাজয়ের কারণে ডাকসু ও ছাত্রলীগের আয়োজনে এত বড় প্রোগ্রামকে বানচাল করার জন্য তার (শোভন) অনুসারীদের দ্বারা এসব কাজ ঘটিয়েছেন।
আয়োজনের বিষয়ে সভাপতি শোভনকে না জানানোর অভিযোগ নিয়ে রাব্বানী বলেন, প্রোগ্রামটি মূলত ছাত্রলীগ এবং ডাকসুর আয়োজনে করা হচ্ছে। এই প্রোগ্রামের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসাইনকে। তিনি ছাত্রলীগের সভাপতিকে কমপক্ষে ৮-১০ বার ফোন দিয়েছেন, কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরে এসএমএস করে তাকে জানানো হয়।
এদিকে রাতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের কিছুক্ষণ পর এ এফ রহমান হলে শোভন সমর্থক কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীর ওপর হামলা হয়।
হলের শিক্ষার্থীরা জানান, হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষারের রুমের দরজা ভেঙে ভাংচুর করা হয়। ৩১৩ এবং ৩১৫ নম্বর কক্ষে তালা দেওয়া হয়। এই কক্ষগুলোতে তুষারের অনুসারীরা থাকতেন।
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগকর্মী সাগর রহমানকে মারধর করে তার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শোভনের অনুসারী তুষার বলেন, ঘটনার সময় আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন। তবে জেনেছি যে সাদ্দাম হোসাইনের নির্দেশনায় হল সংসদের ভিপি আব্দুল আলীম খান নিজে উপস্থিত থেকে আমার কক্ষে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়, অন্য দুটি কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়।
ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমি পুরো ঘটনাটা শুনেছি। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে কনসার্ট আয়োজনের স্পন্সর কোমলপানীয় প্রতিষ্ঠান মোজোকে অনুষ্ঠানের সামগ্রী নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোজোর কর্মীরা জানান, দুই দফা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর আমরা নিরাপত্তহীনতার কারণে চলে যাচ্ছি।