
গাইবান্ধায় শিক্ষার নামে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অবাধে গড়ে ওঠা অসংখ্য কোচিং সেন্টারের ফাঁদে আটকে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কোচিং সেন্টারের মাত্রাতিরিক্ত ফি পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অভিভাবকরা। সন্তানের প্রাইভেট কোচিং এর ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে এসব পরিবারের অভিভাবকরা আর্থিক দৈন্যের শিকার হচ্ছেন। তাদের সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে এখন তারা পড়েছেন চরম দুর্বিপাকে। কতিপয় শিক্ষকের অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক মানসিকতার কারনে শিক্ষা ব্যবস্থায় এখন আর স্কুল নির্ভরতা নেই। স্কুলের কতিপয় কিছু শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়তে হবে। তাদের নিয়ন্ত্রিত কিংবা মালিকানাধীন কোচিং সেন্টারে পড়তে হবে, নইলে পরীক্ষার ফলাফল পর্যন্ত উল্টে যায়। চিহ্নিত এক শ্রেণির শিক্ষক গোটা গাইবান্ধার শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রন করছে।
শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরাও এমন দশায় পড়েছেন, আর অভিভাবকেরা আছেন জিম্মি দশায়। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ওইসব নির্দেশনা না মানলে মানসিকভাবে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে।
স্কুল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী আলো, সেলিনা, ওবাইদা, ফেন্সি, জয় ও মারুফ জানায়, স্কুল কলেজের স্যারদের কাছে প্রাইভেট বা নির্দিষ্ট কোচিং সেন্টারে পড়তে না গেলে পরীক্ষার ফলাফল পর্যন্ত পাল্টে দেয়া হয়। আর যারা শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট কিংবা কোচিং করছে তারা পরীক্ষায় ভালো না করলেও তাদের ফলাফল ভালো করে দেয়া হয় বলে তারা জানান। ক্লাসে ক্লাসে হুমকি দেয়া হয়, প্রাইভেট বা কোচিং না করলে নিচের ক্লাসে নামিয়ে দেয়া হবে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার সহ জেলার সকল উপজেলা গুলোতে শতভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৯৭ ভাগ শিক্ষার্থী প্রাইভেট কিংবা কোচিং সেন্টারে আটকা পড়ছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গড়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পিছনে প্রতিমাসে অভিভাবকদের গুণতে হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আবার প্রতি বিষয়ে ১৫ দিনে মাস ধরে প্রতি বিষয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে হচ্ছে। কোচিং এ ভর্তির সময় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা নেয়া হয়। অবস্থা এমন হয়েছে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগান দেয়া এখন অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। তারা দিশেহারা হয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে প্রাইভেট কিংবা কোচিং নির্ভরতার কারণে ক্লাসের পাঠদান নিম্নগামী। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে আশংকাজনকভাবে।
কয়েকজন অভিভাবক জনান, লেখাপড়া এখন প্রাইভেট ও কোচিং নির্ভর হয়ে গেছে। শিক্ষকরা বাড়িতে, নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানো শিক্ষকদের বাড়িতে, ভাড়া বাসায় বা নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোর থেকে সকাল ১০টা আবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জমজমাট উপস্থিতি। শিক্ষকদের এখানে পাঠদান করানোর আন্তরিকতাও শতভাগ। যেন তারা নিজেকে উজাড় করে পাঠদান করাচ্ছেন।
গাইবান্ধা জেলার শিক্ষা অফিসার এনায়েত হোসেন বলেন, সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট সারাদেশে শিক্ষকদের কোচিং বন্ধে নীতিমালা প্রকাশ করেছে। আর এটি বাস্তবায়নে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে বৈঠকও হয়েছে। কেউ এই নীতিমালা অমান্য করলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধে মহামান্য হাইকোর্টের জারিকৃত নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে অভিভাবকদের প্রত্যাশা, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা হোক।