
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে ‘বিনা চিকিৎসায়’ কারাগারে আটকে রেখে ‘হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছে তার দল বিএনপি।
শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, পরিবারের সদস্যবৃন্দ বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে কারাগারে গিয়েছিলেন। তার এসে যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে আমরা কেবল উদ্বিগ্নই নয়, আমরা হতবাক, বিস্মিত।
খালেদার অসুস্থার কথা বার বার জানানোর পরও সরকার তার চিকিৎসার কোনো ‘ব্যবস্থা নিচ্ছে না’ অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে মিথ্যা সাজানো মামলায় শাস্তি দিয়ে কারাগারে বেআইনিভাবে আটক রেখে তাকে হত্যা করার হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে রাজনীতি এবং আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে রেখে একতরফা নির্বাচনে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করবার নীলনকশা নিয়েই এগোচ্ছে সরকার।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার এতটাই নিচে নেমে গেছে যে একজন মারাত্মকভাবে অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তারা চিকিৎসার কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ চিকিৎসা পাওয়া তাঁর সাংবিধানিক অধিকার।’
ফখরুল বলেন, ‘গণবিরোধী সরকার নিশ্চিত হয়েছে যে খালেদা জিয়া মুক্ত হলে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিপন্ন হবে এবং আগামী নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হতে বাধ্য। এটা এখন শুধু আমাদের কথা নয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক ভট্টাচার্য সম্প্রতি তাঁর লেখায় বলেছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটবে। খালেদা জিয়া যেন নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে না পারেন এবং জনগণ যেন তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারে, সে জন্যই সরকার তাঁকে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বেআইনিভাবে সাজা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।’
বিএনপির মহাসচিব অবিলম্বে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, ‘অন্যথায় সকল দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিশেষ করে সংবিধান লঙ্ঘন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে তাদের অভিযুক্ত হতে হবে। কারা কর্তৃপক্ষকেও আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্তৃপক্ষ। আপনাদের দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে আইন ও বিধান দ্বারা পরিচালিত। এ দায় আপনাদেরও বহন করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশকে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতায় দেশ চলছে। বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। জনগণ এদের পরিবর্তন চায়। ইতিহাসের কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতে হবে। সকল দায়দায়িত্ব আপনাদের ওপর বর্তাবে।’
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ। অবিলম্বে বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানান্তর করে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া তাঁর জীবন রক্ষার জন্য অতি প্রয়োজন। সরকার কোনো কথার কর্ণপাত না করে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য চিকিৎসা না দিয়ে পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর কক্ষে আবদ্ধ করে রেখেছে। একজন সাধারণ বন্দির সঙ্গেও এ ধরনের আচরণ করা হয় না। খালেদা জিয়ার অবদান যাঁরা অস্বীকার করতে চান, তারা কেউই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলে আমরা মনে করি না।’
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মাসুদ অরুন, মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।