
আজ ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এক রহস্য মৃত্যু হয় সালমান শাহ’র। দীর্ঘ ২২ বছর পার হলেও বাংলা সিনেমার ‘স্টাইল আইকন’খ্যাত একসময়কার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সামলান শাহ’র মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াল সময়ে ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। তাঁর প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায়। যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’। তাঁর নানার মূলবাড়ি ছিল মৌলভিবাজারে। খুলনা ও ঢাকার বিভিন্ন স্কুল, কলেজে কেটেছে সালমানের শিক্ষাজীবন।
পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে চলচ্চিত্রে পা রাখেন সালমান। তাঁর প্রথম ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে। নায়িকা মৌসুমির সঙ্গে করা এই ছবিটি সালমানকে দ্রুত জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
এরপর থেকে রীতিমত উড়তে থাকেন সালমান। একের পর এক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন গেঁড়ে নেন। ক্যারিয়ারে তাঁর অভিনীত ছবির সংখ্যা ২৭টি। সবচেয়ে বেশী ১৪টি ছবিতে জুটি বেঁধেছেন অভিনেত্রী শাবনূরের সঙ্গে। এছাড়াও টেলিভিশনে তার অভিনীত গুটি কয়েক নাটক প্রচারিত হয়।
বাংলা সিনেমার ‘স্টাইল আইকন’খ্যাত একসময়কার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সামলান শাহ’র মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। কয়েক দফা তদন্তে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তা অদ্যাবধি মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার ও অগুনতি ভক্ত।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের শেষের দিকে পুলিশের নবগঠিত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নতুন করে তদন্তভার দেয়া হয়।
তবে দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় এ মামলার অসংখ্য আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। একই সঙ্গে সম্পৃক্তদের অনেকেরই জবানবন্দি নেয়াও সম্ভব হয়নি।
এমতাবস্থায় অধিকতর তদন্তে কতটুকু অগ্রগতি হবে তা নিয়ে খোদ তদন্ত সংশ্লিষ্টরাই সন্দিহান। এদিকে মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী।
একই সঙ্গে তিনি সালমান শাহ’র মৃত্যুবার্ষিকীতে তার অভিনয় করা কোনো সিনেমা না চালানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আগামী ১৮ নভেম্বর এ মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
জানতে চাইলে সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী লন্ডন থেকে মুঠোফোনে বলেন, সালমান শাহ’র মৃত্যুবার্ষিকীতে একটাই চাওয়া, তা হল- ৬ সেপ্টেম্বর (মৃত্যুবার্ষিকী) যেন দেশের কোনো সিনেমা হলে কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় শালমান শাহর সিনেমা দেখানো না হয়।
এদিন সালমান শাহর জন্য দোয়া বা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা যেতে পারে। কিন্তু তার স্মরণে কোনো সিনেমা যেন না দেখানো হয়। কেন না, কারও বাবা-মা বা সন্তান মারা গেলে, সাধারণত সবাই দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। তাদের ভিডিও দেখে না।
তিনি বলেন, অনেক প্রচেষ্টার পর এ মামলাটি এতদূর নিয়ে আসতে পেরেছি। মামলায় রুবি নামের এক আসামি ভিডিও বার্তায় সালমান শাহ’কে হত্যা করা হয়েছে- তা স্বীকার করেছেন। এটা বাস্তব সত্য। তার (রুবি) ভাইয়ের ওপর আঘাত করেছে বলেই সে এখন সত্য বলে দিচ্ছে। সেও আমার ছেলে হত্যায় জড়িত ছিল। হত্যার আলামত সালমানের স্ত্রী সামিরাই ওই রুবির হাতে দিয়ে নষ্ট করেছিল।
সালমান শাহ’র মা বলেন, ১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট সামিরার একটি নোট বই আমার হাতে আসে। তাতে লেখা ছিল, ‘তুমি আমাকে ডিভোর্স করে পৃথিবীতে থাকবে, না না …’- এ নোটটি সিআইডিকে দিয়েছিলাম। তার কোনো উত্তর পাইনি। পরবর্তী সময়ে ওই নোট বইয়ের আর খোঁজ পাইনি। সামিরার ওই নোট থেকেও সালমানের হত্যার বিষয়টি ধারণা করা যায়।
এছাড়া ঘটনার দিন বেবিটেক্সি করে সব মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আর দুই মাস আগেই ঘর থেকে স্বর্ণালংকার চুরি হয়ে গেছে।
সালমান শাহ’র মা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরও বলেন, এতদিন পর এক নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সালমান শাহ হত্যার বিচার হবে বলে প্রধানমন্ত্রীও আশ্বাস দিয়েছিলেন।
বিচার এখন দ্বারপ্রান্তে। আসামি (রুবি) নিজেই তা স্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় আসামি রুবিকে দেশে এনে সাক্ষী নেয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র ইন্সপেক্টর সিরাজুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে মামলার সাক্ষী হিসেবে নতুন করে সালমানের মামা ও মা’র বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া এ মামলার আসামি রুবির দুটি ভিডিও বার্তা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
তবে দুই ভিডিও বার্তা দুই রকম কথা বলেছেন রুবি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলাটি বেশ পুরনো বিধায় এ মামলার নতুন করে কোনো আলামত পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ।
যেসব আলামত ছিল তাও অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ সাক্ষী ও আসামি বিদেশ থাকায় মামলাটির তদন্ত নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কবে নাগাদ এ তদন্ত শেষ হতে পারে তা বলা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে নীলা চৌধুরীর অন্যতম আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, মামলার তদন্তে একটু বিলম্ব হলেও আশা করছি তদন্ত সংস্থা রিপোর্ট দিতে পারবে।