
‘এটা নির্বাচনের বছর, এটা সত্য কথা, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন। নির্বাচনের বছরে চাই না কোনো রকম অনিয়ম হোক, কোনো রকম অনিয়মের চিত্র পত্রপত্রিকায়, মিডিয়ায় আসুক’ বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
বুধবার খাদ্য অধিপ্ততরের সভাকক্ষে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সম্পর্কিত মতবিনিময় সভায় আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের (ডিসি ফুড) উদ্দেশে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। খাদ্য অধিপ্ততরের মহাপরিচালক মো. আরিফুর রহমান অপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সুবিধাভোগীদের তালিকা করার ক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি থাকতেই পারে। কিন্তু এবার আমরা মোটামুটি স্বচ্ছ ও নির্ভুলভাবে এই কাজটা করতে চাই, ডিস্ট্রিবিউশনটা করতে চাই। এটা নির্বাচনের বছর, এটা সত্য কথা, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন। নির্বাচনের বছরে চাই না- কোনো রকম অনিয়ম হোক, কোনো রকম অনিয়মের চিত্র পত্রপত্রিকায়, মিডিয়ায় আসুক।
তিনি আরো বলেন, আমি ডিসি ফুড আরসি ফুড কর্মকর্তাদের বলব, আপনারা অত্যন্ত সচেতন থাকবেন কোথাও যাতে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত না হয়। কোথাও কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তা সংশোধনের ব্যবস্থা করবেন। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, কোথাও যাতে কোনো অনিয়ম না হয়, সে জন্য আপনারা অতন্দ্রপ্রহরীর মতো সজাগ থাকবেন।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের বছরে কোনো পক্ষ সরকারকে আনপপুলার করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরকারের দোষত্রুটি তুলে ধরার চেষ্টা করতে পারে। এবার সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। একটি পক্ষ সেই চেষ্টা করতে পারে, তাই এ ব্যাপারে আপনারা সতর্ক থাকবেন।’
তিনি আরো বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে নিরন্ন মানুষের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। আড়াই কোটি মানুষ এই কর্মসূচির সুফল ভোগ করছে। চালুর পর এই কর্মসূচি নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক নিউজ এসেছে। আমরা সেটা থেকে সাবধান হয়েছি।
কামরুল ইসলাম বলেন, কিছু কারেকশন করার সুযোগ পেয়েছি। পরবর্তী প্রান্তিকে যখন আবার চালু হয়েছিল তখন আমরা প্রথম প্রান্তিকের ভুলভ্রান্তি সংশোধন করতে পেরেছিলাম। এখন যে কেউ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে যে কোনো স্থানের সুবিধাভোগীদের সংখ্যা, নাম-ঠিকানা দেখতে পারেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই কর্মসূচির তালিকা প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের মধ্যেও রেষারেষি আছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। অনেক ক্ষেত্রে রেষারেষির কারণে ম্যানুপুলেট করে সংবাদ সরবরাহ করার চেষ্টা করে। সেদিকেও আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। কোনো রকমের দুর্নীতি, কোনো রকমের অস্বচ্ছতা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর- এই তিন মাসের কর্মসূচিতে যাতে ধরা না পড়ে। আমি চাই এবারে এই কর্মসূচি একেবারে নির্ভুল হোক। সব ধরনের ত্রুটিমুক্ত যাতে এই কর্মসূচিটি থাকে।’
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আগামী দিনে মানুষ আমাদের পক্ষেই রায় দেবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে রায় দেবে। নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা দুর্গম অঞ্চলে ডিলারদের পরিবহন খরচ বাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন। ডিলাররা প্রায় সবাই রাজনৈতিক পরিচয়ধারী, তাই কর্মসূচি শুরুর আগে ডিলারদের নিয়ে বৈঠক করার প্রস্তাব দেন তারা।
এর আগে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রামে পুষ্টিচাল বিতরণ করা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এবার নতুন ৮টি উপজেলায় পুষ্টি চাল দেয়া হবে। ঢাকার কেরাণীগঞ্জ, গাজীপুরের কালিগঞ্জ, গোপালগঞ্জের মুকছুদপুর, ফরিদপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও বিজয়নগর, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এবং বরগুনার বামনা উপজেলায় পুষ্টি চাল দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা ক্রমান্বয়ে সব উপজেলায় পুষ্টি চাল সরবরাহের ব্যবস্থা আমরা করব। সেই কার্যক্রম আমাদের চলছে। পুষ্টিচালের জন্য মিল চালু হচ্ছে। ভবিষ্যতে পুষ্টিচাল যাতে বাজারে কিনতে পাওয়া যায় আমরা সেই ব্যবস্থাও নিচ্ছি।
তিনি বলেন, অতীতের সর্বকালের রেকর্ড পরিমাণ মজুদ আমাদের এখন রয়েছে। বাজারে চালের দাম বাড়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। পর্যান্ত খাদ্যশস্য মজুদ আছে আমাদের। নীতিমালা অনুযায়ী বছরের মার্চ, এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর- এই পাঁচ মাস এই কর্মসূচি চলে।সূত্র-আরটিএনএন