
ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর ভাঙনে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার প্রায় ৫শ’ ৪৬ বর্গকিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর এই দীর্ঘ সময়ে নদীভাঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়েছে এই চার উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষ। ৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনার তীর স্থায়ীভাবে (সিসি ব্লক দ্বারা) সংরক্ষণ করা আছে মাত্র সাড়ে ৯ কিলোমিটার এলাকা।
ইতিহাসসহ বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, নদীভাঙন ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভবানীগঞ্জ থেকে গাইবান্ধার দিকে ৭ কিলোমিটার এলাকা (কোথাও ৭ কিলোমিটারেরও বেশি) ভেঙেছে। ফলে ৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর পুরোটা পশ্চিম তীরজুড়ে স্থলভূমির প্রায় ৫শ’ ৪৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিলীন হয় নদীগর্ভে। আর নদীভাঙনের শিকার হয়ে এসব এলাকার প্রায় চার লাখ মানুষ সহায়-সম্বল হারায়।
বর্তমানে নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর, সদর উপজেলার কামারজানী, মোল্লারচর ও গিদারী, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া, উদাখালী, গজারিয়া, এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর ও ফুলছড়ি এবং সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী, সাঘাটা, হলদিয়া ও জুমারবাড়ী ইউনিয়ন।
প্রতিবছর নদীভাঙনে হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হলেও ভাঙন মোকাবেলায় কাজ হয়েছে খুব কমই। বর্তমানে ৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর মধ্যে মাত্র সাড়ে নয় কিলোমিটার স্থায়ীভাবে (সিসি ব্লক দ্বারা) নদীর তীর সংরক্ষণ করা আছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এলাকাগুলো হচ্ছে পুরাতন ফুলছড়ি হেডকোয়ার্টার এলাকা, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা বাজার, সদর উপজেলার কামারজানী বাজার ও বাগুড়িয়া, ফুলছড়ি উপজেলার সৈয়দপুর, কঞ্চিপাড়া ও বালাসীঘাট এবং সাঘাটা বাজার এলাকা। এসব এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ ১৯৯৭ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৬ সালে। এছাড়া নদীভাঙন ঠেকাতে নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মান সরকারের আর্থিক অনুদানে ১৯৯৪ সালে শুরু হওয়া সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের আনালেরছড়া ও ধুতিচোরা গ্রামে নদীর তীর সংরক্ষণসহ গ্রোয়েন নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৭ সালে। যা নদীভাঙনরোধে খুবই কার্যকরী হয়।
এদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে গাইবান্ধার চার উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। প্রতি বর্ষা মৌসুমে ভাঙন কবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে চেষ্টা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দায়সারা ও অপরিকল্পিত কাজে অর্থ ব্যয় করে স্থায়ীভাবে সিসি ব্লক দিয়ে নদীর তীর স্থায়ীভাবে (সিসি ব্লক দ্বারা) সংরক্ষণ না হওয়ায় অনেক সময় এই চেষ্টা বিফলে যায়। ফলে প্রতিবছর সরকারের লাখ লাখ টাকার অপচয় হয়। তাই শুকনো মৌসুমেই ভাঙনরোধে কাজ করার দাবি জানিয়েছে নদী এলাকার মানুষ।
এব্যাপারে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, নদী ভাঙনরোধে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকা নদীর তীর স্থায়ীভাবে (সিসি ব্লক দ্বারা) সংরক্ষণ করার কাজ চলছে। এছাড়া নদীভাঙন ঠেকাতে নদীর তীর সংরক্ষণে কয়েকটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।