
ছবিতে যে পঙ্গু লোকটিকে দেখছেন তিনি নাটোরের কৃতি ফুটবলার রিয়াজ আলম খান চৌধুরী তানভীর! পরিচিত তানভীর চৌধুরী নামে। বয়স ৩৯। তাঁর বাড়ি নাটোরের প্রাণকেন্দ্র কানাইখালী পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে।
এক সময়ের জাতীয় দলের দাপুটে ফুটবল খেলোয়াড়। সেই ১৯৯৫ সাল থেকে ফার্স্ট ডিভিশন লীগের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু। এশিয়া কাপ খেলার মাধ্যমে ১৯৯৮ সালে জাতীয় দলে অভিষেক। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, ওমান, উজবেকিস্তান, কাতার, লন্ডনসহ প্রায় ১৪টি দেশের মাটিতে জাতীয় দলের হয়ে বিভিন্ন ফুটবল টুর্ণামেন্টে অংশ নিয়েছেন তিনি।
খেলতেন লেফ্ট মিড ফিল্ডার হিসাবে। গোল করেছেন গোল করিয়েছেন, তবে গোল করিয়েই আনন্দ পেতেন বেশি।
কিন্তু কেমন আছেন এই প্রতিভাবান এবং দেশের প্রতি দায়িত্বসম্পন্ন ফুটবলার তানভীর ?
একটি সড়ক দুর্ঘটনা স্তব্ধ করে দিয়েছে দাপুটে এই খেলোয়াড়কে । ২০১৫ সালের ১৯শে মে ভোর ৫.৪৫ মিনিটে দেশ ট্রাভেলসের একটি কোচে ঢাকা যাওয়ার পথে গুরুদাসপুরের কাছিকাটা এলাকায় বিপরীতগামী একটি ট্রাকের সাথে সংঘর্ষে মারাত্মক ভাবে আহত হন এই সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার তানভীর। তাঁর বুকে-পেটে রড ও কাঁচ ঢুকে যায়, মাথার পিছনে মারাত্মক আঘাতে তাঁর স্মৃতিশক্তি, কথাবলা ও চলার শক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।
মারাত্মক জখম অবস্থায় তাঁকে প্রথমে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে স্থানান্তর করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । তাঁর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে রাজশাহী মেডিকেলের ডাক্তারগণ উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করেন।
তাঁকে হেলিকাপটারে করে ঢাকায় নেয়া হয়। এরপরে তাঁকে তাৎণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল থেকে স্কয়ার মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দীর্ঘ ৩ মাস ৬ দিন চিকিৎসা দেয়ার পর তাঁকে সাভারে অবস্থিত সিআরপিতে আরো ৩ মাস ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি তাঁর মাথার পেছনে এমন মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন যে দেশে এত উন্নত চিকিৎসা করার পরও তাঁকে পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হয়েছে। তিনি উঠে দাঁড়াতে পারেন না, নিজ হাতে তুলে কিছু খেতে পারেন না, কাউকে চিনতেও পারেন না, তাঁর সমস্ত সময় কাটে হুইল চেয়ারে আর বিছানায় ।
দুর্ঘটনা পরবর্তী পর্যায়ে চিকিৎসা খরচ সংকুলানের জন্য সাড়ে তের লাখ টাকা যোগাড় করা সম্ভব হয়েছিল। এছাড়া নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোস্তাক আলী মুকুলসহ সংস্থার সদস্যরা সব সময়ই তার পাশে থেকে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন।
তাছাড়া জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় দিয়েছেন দেড় লাখ টাকা, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন দিয়েছে দুই লাখ টাকা, অলিম্পিক এ্যসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ দিয়েছে এক লাখ টাকা, জাতীয় দলের সতীর্থরা সম্মিলিতভাবে দিয়েছেন এক লাখ টাকা, দেশ ট্রাভেলস কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন এক লাখ টাকা এবং তানভীরের পরিবার ব্যক্তিগতভাবে খরচ করেছে সাত লাখ টাকা।
এছাড়াও ১১ লাখ টাকা স্কয়ার হাসপাতালে দেনা আছে যা অর্থাভাবে এখনও পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি ।
তানভীরকে প্রতিদিন যে ফিজিওথেরাপি দেয়া হয় তার খরচ ১৫০০/- এবং মাসিক ঔষধ পত্রের খরচ প্রায় ৪০০০/- । এই বিশাল অংকের ব্যয় বহন করা তানভীরের পরিবারের পক্ষে এখন দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এব্যাপারে তানভীরের সহধর্মিনী শাহ্দিল-ই-আফরোজ (আলো) দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেন তানভীর একজন ভালো মেধাবী খেলোয়াড় । জাতীয় দলে দেশের হয়ে অনেক ভালো খেলা উপহার দিয়েছে, দেশের সুনাম অর্জন করেছে । কিন্তু আজ সে বড় অসহায়। দুর্ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই দুই বছরে কেউ একবারও খোঁজ নেন নি। তাঁর প্রতি মাসের চিকিৎসা খরচ এত বেশি যে তা আমার পক্ষে বহন মোটেই সম্ভব হচ্ছে না।
তানভীর দম্পতির তাজবিতা ও তানবিতা নামের ফুটফুটে দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। স্বামীর চিকিৎসা এবং দুটি মেয়ের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন বড়ই উদ্বিগ্ন শাহ্দিল-ই-আফরোজ (আলো)।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন তাকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে অথবা যেকোন সরকারী প্রতিষ্ঠানে একটি চাকুরির সুব্যবস্থা করে দিলে তানভীরের চিকিৎসাসহ সংসারের খরচ মেটানো সম্ভব হতো ।
এছাড়াও তার বড় আশা বিদেশে নিয়ে স্বামীর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে তাকে হয়তো আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এব্যাপারে তিনি সমাজের দানশীল বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন।
তানভীরের মা মাহফুজা চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে দেশের হয়ে খেলে সুনাম বয়ে এনেছে । তার এই বিপদে সমাজের মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি যাতে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানো যায় ।
তানভীরের শ্বশুর শাহ্ মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, তানভীর জাতীয় দলের একজন কৃতি ফুটবলার। এই বিপদের দিনে তার সুস্থতার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করছি এবং বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানাচ্ছি।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ( বাফুফে) দেশ ব্যাপী আঞ্চলিক ফুটবল টূর্ণামেন্টের আয়োজন করতে পারে!
পারে আবাহনী মোহামেডান নিয়ে জাতীয় স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলার আয়োজন করতে!
বাংলাদেশে ফুটবল এখনো যথেষ্ট জনপ্রিয় খেলা!
তাছাড়া টিভি মিডিয়া ফেইসবুক থেকে সেলেব্রেটিরা প্রচার প্রচারণা চালালে মানুষ অবশ্যই খেলা দেখতে আসবে!
আর এইভাবে খেলার প্রাইজমানি থেকেই তানভীরের চিকিৎসার টাকা উঠে আসবে ইনশাআল্লাহ!
এখন দরকার প্রচার এবং প্রচারণা! করবেন কেউ?