
সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে যৌতুকের ঘটনা কমছে না বরং বাড়ছে। সময়ের ব্যবধানে যৌতুকের পরিমাণেও বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। সর্বনাশা যৌতুকের মর্মান্তিক পরিণতিতে মৃত্যুুর ঘটনা আমাদের দেশে অহরহ ঘটছে আর এমন আত্মহননের ঘটনা আমাদের সকলকে জানিয়ে দিল গ্রাম গ্রামান্তরে এখনো যৌতুক প্রথার শেকড় কত গভীরে রয়েছে। যৌতুককে কেন্দ্র করে নারীরা প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছেন নির্যাতনের। অনেকেই এখনো ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে । এবার যৌতুকের মোড় নেয় অন্যদিকে। বিয়ের আগে যৌতুকের দাবি সইতে না পারায় গাইবান্ধার ফুলছড়িতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে নবম শ্রেনীর এক ছাত্রী। ৫ জন কে আসামী করে থানায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় বিয়ের আগে যৌতুক চাওয়ায় নিলুফা ইয়াসমিন লিজা নামে ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করার এ হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫ জুন রাতে গাইবান্ধা ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের উত্তর কঞ্চিপাড়া গ্রামে । এ দিন বেলা ১২ টায় নিজ বাড়ীতে বিষপান করে। চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে আট ঘটিকায় মারা যায়।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একই গ্রামের কোরবান আলীর পুত্র নাজমুল মিয়ার সাথে লতিফ মিয়ার মেয়ে লিজার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো দীর্ঘদিনের । উভয় পরিবার ব্যাপারটি জানার পর পারিবারিক ভাবে নাজমুর ও লিজার বিয়ের ব্যাপারটি ঠিক হয় । এরপর নাজমুল লিজার নিকট একটি মোবাইল ফোন পাঠিয়ে লিজাকে বলে তার বাবার নিকট ২ লাখ টাকা যৌতুকের কথা বলতে এবং তা বিয়ের আগে দিতে হবে বলে জানিয়ে দেয়। কিন্তু লিজার বাবা-মা’র পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা মোটেই সম্ভব নয়। অন্যদিকে চাহিদা মাফিক টাকা দিতে না পাড়ায় হবো শশুর বাড়ীর লোকজনের অপমানজনক ও আত্ম মর্যাদা ক্ষুণমুলক ভাষায় স্বীকার হয়ে লিজা তার পিতা-মাতার নিকট যৌতুকের এতো টাকার কথা বলতে পারবেনা বিধায় এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। লিজার পরিবারের অভিযোগ লিজা নাজমুলের সাথে মোবাইলে ফোনে কথা বলতে বলতে বিষপান করেন। এলাকাবাসী তা জানতে পেলে মুমূর্ষু অবস্থায় লিজাকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ১১ঘন্টা মৃত্যু যন্ত্রনায় থেকে রাত সারে ৮টায় লিজা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এবং মৃত্যুর আগে প্রেমিকের কাছে লেখা চিঠিতে বিষয় গুলো উল্লেখ্য করেছে। এঘটনায় থানায় মামলা হলেও এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার না করায় যৌতুকের বলি লিজার সহপার্টি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক স্থানীয় জনগনের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় থানা মামলা দায়েরকারী লিজার চাচা মমিনুর রহমান জানান, মামলা হলেও এ পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় আমাদের পরিবার হতাশাগ্রস্ত। তিনি বলেন, আমরা তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তি দাবী করছি।
এব্যাপারে ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, এঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশী তৎপরতা অবহ্যত থাকা সহ মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।