
দেশের বর্তমান ক্ষমতাসিন দলের সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে প্রকাশিত মাদকের প্রতিবেদন বনাম গাইবান্ধা জেলা জুড়ে সংবাদ সম্মেলনের ঝড় তুলেছেন প্রতিবেদন প্রকাশিত নামের ব্যক্তিরাসহ রাজনৈতিক, সামাজিক, পরিবহন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ । তারা এ প্রতিবেদনের পূর্ণরায় তদন্ত সহ প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছেন। সচেতন জনগণ চেয়ে চেয়ে দেখছেন তাদের মনে জল্পনা কল্পনা চলছে। তারা মনে করে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে কি মিথ্যা প্রতিবেদন আসছে নাকি প্রতিবেদন প্রকাশিত নামের ব্যক্তিরা সত্যি সত্যি অভিযুক্ত।
প্রতিবেদনটি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশের পর হতে জেলার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সহ মটর শ্রমিক ও মালিক পক্ষ প্রতিবেদনের পূর্ণঃতদন্ত ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন অব্যহত রেখেছেন।
জেলা জুড়ে এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন এ প্রতিবেদন প্রকৃত অপরাধী মাদককারবারিদের আড়াল করে নির্দোশ ব্যক্তিদের জড়িয়ে সম্মানহানি করা হচ্ছে। এ কারণে জেলা জুড়ে বিভ্রান্তি সহ নানা জল্পনা কল্পনার মধ্যে আছে সচেতন জনতা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে প্রতিবেদনে যা ছিলো : শীর্ষপর্যায়ের ১২১ মাদক ব্যবসায়ী। আর জেলার শীর্ষপর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন শীর্ষস্থানীয় এক প্রতিনিধিসহ ২৭ জন।
তাদের বেশিরভাগই জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা। সম্প্রতি একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই প্রতিবেদনে ১৩ জন পুলিশ সদস্যের নামও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে সারা দেশে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এরই অংশ হিসেবে গাইবান্ধা জেলার তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এ তালিকা অনুযায়ী জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- গাইবান্ধা সদরের ওয়াজেদ মিয়া, নল্টু মিয়া, হারুন আর রশিদ ওরফে তোতা মিয়া (ইউপি মেম্বার), টুটুল, বাঁধন মিয়া, পৌর এলাকার মাসুদ রানা, সাজ্জাদ হোসেন, মুরাদ হোসেন, সোহেল মিয়া, মো. জিম, ফরিদুল ইসলাম, মুকুল মিয়া, সাদ্দাম হোসেন, মিলন মিয়া, তৌহিদুল ইসলাম, আবু মিয়া, জনি মিয়া চাঁন মিয়া, আমিন মিয়া, নারু মিয়া, গাইবান্ধা ব্রিজ রোড এলাকার আরিফ হোসেন, ফুলছড়ির নাসির উদ্দিন (সাবেক মেম্বার), মকবুল হোসেন (কসাই), তাজেল উদ্দিন, করিম উদ্দিন (ডাকাত), আনিসুর রহমান আনিস, ফুলছড়ি কাইয়ারহাট মসজিদের ইমাম মজনু মিয়া, ইউপি সদস্য কাবিল উদ্দিন, সুন্দরগঞ্জের মমিনুল ইসলাম, নুরু মিয়া, বাদশা মিয়া ওরফে ঝাউলী বাদশা, মো. বাদশা মিয়া, মো. ইসমাইল, হিরু মেম্বার, পলাশবাড়ীর মাজেদ মিয়া, রানা ওরফে ডাইল রানা, তাহেনুর, রেজাউল করিম, লেবু প্রধান, জিল্লুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, টিটু মিয়া ওরফে টিটু সরদার, সাঘাটা উপজেলার কানাই, সোহেল ওরফে মাজার সোহেল, অন্তু, রাশেদ হোসেন, মোজাহার আলী, সাদেকুল ইসলাম, সালাহ উদ্দিন, হাজের আলী, শাহনাজ বেগম, গোবিন্দগঞ্জের আফলাক হোসেন, জাফরুল ইসলাম রাব্বীর ওরফে রাব্বী, লাভলী বেগম, লাভলু মিয়া, মেনারুল ওরফে মেনার, কবিতা বেগম, শহীদুল ইসলাম মো. রনি, সাদুল্লাপুরের আবদুর রাজ্জাক, মোকলেছার রহমান, নীলু মিয়া, ঠাণ্ডা মিয়া, মধু মিয়া ওরফে ঠুন্ডা মধু প্রমুখ।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাইবান্ধার মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- গাইবান্ধা-৪ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, পৌর মেয়র শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির মিলন, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বিহারী, বাদিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আতোয়ার রহমান, কূপতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, দরবস্ত ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ফারুক হোসেন, একই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফীকুল ইসলাম জজ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. সবুজ, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরওয়ার বিপ্লব, সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ কবীর সুমন, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাদল, বাদিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাফোয়েতুল হক, গোবিন্দগঞ্জ পৌসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদ রানা বাপ্পী, কামদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান, ধাপেরহাট ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আশনুর রহমান, পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর আজম মন্ডল নীরব প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী নিয়মিত মাসোয়ারার বিনিময়ে গাইবান্ধায় যেসব পুলিশ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতা মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছেন তাদের মধ্যে আছেন- জেলা ডিবির এসআই আমিনুল ইসলাম, গাইবান্ধা সদর থানার এসআই জামাল হোসেন, রউফ মিয়া, কনস্টেবল মাসুদ মিয়া, ফুলছড়ি থানার এসআই আবু সালেহ, কনস্টেবল স্বপন কুমার, সাদুল্যাপুর থানার এসআই আরিফ হোসেন, মোসলেম উদ্দিন, হরিণাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মাহবুব আলম, গোবিন্দগঞ্জ থানার কনস্টেবল মোকলেছুর, পলাশবাড়ী থানার কনস্টেবল মঞ্জুরুল, ধাপেরহাট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রেজাউল, কাপাসিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুঞ্জু মিয়া, কুপতলা ইউনিয়েনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ মিয়া, বাদিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী ছাত্রলীগের আহ্বায়ক বাঁধন মিয়া প্রমুখ।
মাদকের রুট ও স্পট : হিলি সীমান্ত দিয়ে রানিগঞ্জ হয়ে পলাশবাড়ী উপজেলায় এবং কাদাদিয়া ইউনিয়ন হয়ে গোবিন্দগঞ্জে মাদক প্রবেশ করে। রাজীবপুর যাত্রাপুর দিয়ে নৌকায় ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল ও মদ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে।
গাইবান্ধায় মাদকের ৬৫টি স্পটে উল্লেখযোগ্যগুলো হল- লক্ষ্মীপুর বাজার, লক্ষ্মীপুর বাসস্ট্যান্ড, ফকিরের বাজার, বাদিয়াখালী বাজার, সবুজপাগা মাসুদ টেইলার্সের দোকান, মাস্টারপাড়া এলাকা, হকার্স মার্কেট, সুইপার পট্টি, মোমিনপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, পশ্চিমপাড়া, শুংশঙ্গীর মোড়, বাংলাবাজার এলাকা, কালীবাজার, মশামালী এলাকা, আলগার চর, বালাসী রোড, শিমুলতাইড় মোড়, কোমরপুর বাসস্ট্যান্ড, পোড়াদহ বাজার, বাসুদেব বাজার, বালুয়া বাজার, বটতলী, সরদারহাট বাজার, পাটনীপাড়া (ধাপেরহাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ১০ গজ উত্তরে), পলাশবাড়ী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকা, রওশনবাগ হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, পালাশবাড়ী এলসি গোডাউনের পূর্ব পাশে, সুন্দরগঞ্জ চৌরাস্তা মোড় এবং উপজেলা রোডসহ বিভিন্ন এলাকা। এ প্রতিবেদনটি দৈনিক যুগান্তরে সংবাদ আকারে প্রকাশিত হওয়ার পর হতে জেলা জুড়ে প্রতিনিয়ত চলছে সংবাদ সম্মেলন।
উল্লেখ্যিত, মাদক কারবারি ও পোষ্টপোষক যে আছে তা যেমন সঠিক তেমনি প্রতিবেদনের বাহিরে যে আরো স্থান, রুট, মাদক, মাদক ব্যবসায়ি, পোষ্টপোষক আছে জেলা জুড়ে তা কিন্তু শতভাগ সঠিক। তবে প্রকৃত ব্যবসায়ি ও পোষ্টপোষকতাকারিদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জোড় দাবী জানিয়েছেন জেলার সর্বস্তরের সচেতন জনতা।
(ছবি গুলো গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন স্থান হতে আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক উদ্ধার করা মাদকদ্রব্যের )