
তারেক রহমানের বক্তব্য ও ছবি প্রচারের ব্যাপারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরও যেসব প্রচারমাধ্যম তার বক্তব্য ও ছবি প্রকাশ করছে, সেটা আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে পাসপোর্ট না থাকলেও বাংলাদেশের নাগরিকত্বে কোনো সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এসময় মন্ত্রী জানান, তারেক রহমান বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দিয়ে দিলেও তাকে ফেরত আনা যাবে।
তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার না করার বিষয়ে আদালতের আদেশ থাকলেও কিছু গণমাধ্যম কিভাবে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার করছে সে বিষয়ে জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, তারেক রহমানের যে বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে, এটা কিভাবে প্রচার করা হচ্ছে সেটা হচ্ছে প্রথম ব্যাপার। এক্ষেত্রে যে বাধা আছে, হাইকোর্টের একটি অর্ডার রয়েছে, সে অর্ডার যদি অমান্য করা হয় নিশ্চয়ই সেটা আদালত অবমাননা করা হবে। সেক্ষেত্রে আমি সবাইকে হাইকোর্টের এ আদেশটি পালন করার অনুরোধ করবো।
তিনি আরো বলেন, তার বক্তব্য আমার মনে হয় না সরকারি দিক থেকে প্রচার করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যক্তি মালিকানাধীন ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ায় যারা প্রচার করছে তাদেরকে আমি এটুকুই বলবো, এখানে হাইকোর্টের একটি আদেশ আছে। সেটা প্রতিফলন করা সকল বাংলাদেশি নাগরিকের কর্তব্য। আমি সেটা প্রতিপালন করার অনুরোধ করছি।
আইনমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে তিনি (তারেক রহমান) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ডিনাই (অস্বীকার) করেছেন। তবে ভবিষ্যতে তিনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হতে চান, তাহলে পারবেন না, এটা তো না।
তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জেনেছি, তিনি যুক্তরাজ্যে নিজের পাসপোর্ট জমা দিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। এটার অর্থ এই নয় যে তিনি বাংলাদেশে আর আসতে পারবেন না। তার বিরুদ্ধে অপরাধের যে সময়কাল ছিল, তখন তিনি বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। এটাই হলো মুখ্য বিষয়।’
তারেক রহমানের পাসপোর্ট জমা দেওয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরেই সরগরম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের দাবি, পাসপোর্ট জমা দেওয়ার মাধ্যমে তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবারই বলেছেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা আইনমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, তারেক রহমান যদি বাংলাদেশের নাগরিক না-ই হন, তাহলে সরকার কীভাবে তাকে ফেরত আনার উদ্যোগ নেবে? জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘পাসপোর্ট না থাকলেও বাংলাদেশের নাগরিকত্বে কোনো সমস্যা নেই। পাসপোর্ট হলো কেবল একটি ট্রাভেল ডকুমেন্ট।’
মন্ত্রী আরো বলেন, এই সরকার তারেক রহমানকে ফেরত আনার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। তিনি একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন। এখন তিনি সেখানে পাসপোর্ট সারেন্ডার করে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন। আশ্রয় দেওয়া-না দেওয়া সেটা যুক্তরাজ্যের বিষয়। যেহেতু বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে আদালতের পরোয়ানা রয়েছে, সরকার এই পরোয়ানার আলোকে তাকে ফেরত আনতে আলাপ-আলোচনা করছে।
এ ছাড়া গতকাল বুধবার বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাসরুফকে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি আসলে একটি বিব্রতকর ঘটনা। আমি পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করব, কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলেই তার সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে যেন তাকে গ্রেপ্তার করা না হয়। যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা উৎসাহী হয়ে গ্রেপ্তার করেন, তবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। আর এর জন্য পুলিশ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’ সরকার বিব্রত হয় এমন কোনো কাজ না করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।