
বদলে যাওয়া এক অনন্ত জলিলকেই দেখছে বাংলাদেশ। নিজেকে টম ক্রুজের সঙ্গে তুলনা করা এ নায়ক আর আগের মতো নেই। প্রতিদিন ভোরে ঘুম ভেঙেই নামাজ পড়ছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, আর সময় পেলেই হাদিসের বই তার হাতে, গাড়িতেও যাত্রাপথে পড়ছেন ইসলামী বই। অফিসের কাজের বিরতিতে কুরআনও পড়ছেন।
আর সুযোগ পেলেই ছুটে যাচ্ছেন ধানমন্ডি ৩২ এর তাকওয়া মসজিদে। এ মসজিদের খতিব মাওলানা উসামার সঙ্গে গত একবছর ধরেই সময় দিচ্ছেন অনন্ত জলিল। যে কোনো মানবিক কাজেও সবার আগে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানো, পরবর্তীতে প্রাণ হারানো তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের ছোট দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েই সোশাল মাধ্যমে তুমুল প্রশংসিত হচ্ছেন অনন্ত জলিল। অনেকে তাকে ‘বাস্তবের হিরো’ খেতাবও দিয়েছেন!
১৭ এপ্রিল নিজের জন্মদিনে নিহত রাজীবের দুই অসহায় ভাইয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নেয়ার কথা জানিয়ে অনন্ত জলিল তার ভেরিফাইড পেজে একটি স্ট্যাট্যাস দেন। সাড়ে ৫ হাজারের বেশি শেয়ার হয়েছে পোস্টটি। দেখা গেছে ৪ হাজারের মতো মন্তব্য।
অনন্তর পোস্টের কমেন্টে চোখে পড়েছে প্রশংসার ফুলঝুরি। তাকে সবাই এমন মহৎ উদ্যোগ নেয়ার জন্য সেলুট জানিয়েছেন। কেউ আবার অনন্ত জলিলের দীর্ঘজীবন কামনা করেছেন।

রহমান পিয়াল নামের একজন লিখেছেন, আমি লজ্জিত নিজের কাছে নিজেই। কারণ আপনাকে নিয়ে হয়তো অনেক অকারণে হাসাহাসি করেছি। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আপনাকে আরও উন্নতি দান করুন।
মুকুল রহমান নামের একজন লিখেছেন, বেশকিছু অনলাইনে আপনার মহৎ উদ্যোগের কথা পড়লাম। আল্লাহ আপনাকে সবসময় এইরকম মহৎ কাজে সাহায্য করুন ও ক্ষমতা দান করুন। আমাদের দেশে অনেক সেলিব্রেটি আছেন বা রাজনীতিবিদ আছেন যাদের এইরকম ভাল, মহৎ কাজ করার ক্ষমতা আছে কিন্তু এইসব কাজ থেকে তারা হাজার মাইল দূরে।
আবদুস সালাম নামে একজন বলেছেন, পৃথিবীতে কিছু উত্তম লোক তো আছেই। যদি তথ্যটি সঠিক হয় তাহলে আশা করি অন্য অবস্থা সম্পন্নরাও ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আগ্রহী হবে।
কামরুল আলম নামে একজন লিখেছেন, আপনাকে নিয়ে অনেক সময় অনেকেই ট্রল করেছে। হয়তো আমিও কোনদিন মনের অজান্তে আপনাকে নিয়ে ট্রল করেছি। তার জন্য আমি এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা করবেন আশা করি। আপনাকে যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। আপনার ও আপনার পরিবারের প্রতি অনেক শুভ কামনা রইল।
শুধু তাই নয় সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, শেষ পর্যন্ত অনন্ত জলিলই দুই বাসের রেষারেষিতে চাপা পড়ে হাত ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারানো রাজীব হোসেনের এতিম দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমাদের মত সুশীল-চেতনার ধ্বজাধারী, টক শোতে বড় বড় কথা বলে দেশ-জাতিকে জ্ঞান দেয়া মানবতাবাদী দেশপ্রেমিক কেউ নয়।
আমাদের জন্য এই চরণ উৎসর্গীকৃত হোক,
মোরা কেবলই হাসি, কেবলই গাই, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চাই –
না জানি বেদন, না জানি রোদন, না জানি সাধের যাতনা যত …
মঙ্গলবার নিজের জন্মদিনে মন খারাপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু দিন আগে বাস দুর্ঘটনায় রাজীব নামে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী তার হাত হারিয়ে ছিলেন। এবং আজ তিনি পৃথিবী হতে বিদায় নিয়েছেন। যা আমাকে বেশ মর্মাহত করেছে। বাবা-মা হারা এই সন্তান তার ছোট দুই ভাইকে পিতা-মাতার স্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছিলো। কিন্তু রাজীবের অকাল বিদায়ে তার দুই ছোট ভাইয়ের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। তাই আমার জন্মদিনে আমি চাচ্ছি যে পরিবার হারা এই দুই সন্তানের পড়ালেখার দায়িত্ব নিতে।
এদিকে অনন্ত জলিলের এমন আশাবাদের পর রাজীবের মেঝ খালা খাদিজা বেগম বলেন, আমাদের আপত্তি নেই। তবে এখন আমরা গ্রামের বাড়ি আছি। রাজীবের দুই ভাই আমাদের সঙ্গেই আছে। ঢাকায় ফিরে আমরা কথা বলতে চাই অনন্ত জলিল সাহেবের সঙ্গে। উনার আগ্রহের জন্য উনাকে ধন্যবাদ।’