
বহুল আলোচিত ফেনীর ফুুলগাজী উপজেলার তৎকালীন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যা মামলার রায়ে ৩৯ ফাঁসি আদেশ দিয়েছে আদালত। খালাস পেয়েছেন বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ওরফে মিনার চৌধুরীসহ ১৬ জন।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনুল হক এ রায় দেন।। ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হকের বরাত দিয়ে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ একথা জানান।
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আলোচিত এই মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য আজকের দিন (১৩ মার্চ) ধার্য করেন। এদিন সব আসামির জামিন বাতিল করেন। ৫৯ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫০ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার চার্জশিটভুক্ত ৫৬ জন আসামির মধ্যে ১৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তাদের মধ্যে হেলাল উদ্দিন নামের একজন পরে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ ছাড়া মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরাও চেয়ারম্যান একরামুল হকের গাড়ির গতিরোধ, গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ৫৬ আসামির মধ্যে ১৪ জন কারাগারে ও ২৪ জন জামিনে ছিলেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালত সকল আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। মামলার শুরু থেকে ১০ জন পলাতক রয়েছেন এবং জামিনে গিয়ে আরো ৭ জন পলাতক হয়েছেন। এছাড়া, জামিনে থাকা মো. সোহেল ওরফে রুটি সোহেল নামের একজন আসামি ইতোমধ্যে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন।
২০১৪ সালের ২০ মে শহরের একাডেমি এলাকায় দিবালোকে তৎকালীন ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক একরামকে গুলি করে, কুপিয়ে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এঘটনায় চেয়ারম্যান একরামুল হকের ভাই রেজাউল হক জসিম বাদী হয়ে বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন ওরফে মিনার চৌধুরীসহ অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে ফেনী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।
ওই বছরের ২৮ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। একই বছরের ১২ নভেম্বর মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। হত্যার প্রায় দুই বছর পর ২০১৬ এর ১৫ মার্চ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করে আদালত। এ বছরের ২৮ জানুয়ারি এ মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। এ মামলায় বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে, মামলার আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মুক্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার সকালে আদালতের বাইরে পুরাতন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খাজুরিয়ায় এলজিইডি ভবনের সামনে মানববন্ধন হয়েছে।
এ সময় শতাধিক কিশোরকে ব্যানার হাতে দেখা যায়। ব্যানারে ‘তৃণমূল ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ’ ও ‘জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ’র পক্ষ থেকে দলীয় নেতাদের মুক্তি দাবি করা হয়- বলে উল্লেখ করা হয়। সকাল ১০টার দিকে মানববন্ধন শুরু হলেও ১৫ মিনিটের মধ্যে পুলিশ তাদের ওই স্থান থেকে সরিয়ে দেয়।