আগামী বছরের মার্চে ক্যাম্পাসের সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে আগামী বছরের ৩০ মার্চের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সেজন্য এ বছরের ৩০মে এর মধ্যে হলগুলোকে ডাকসু নির্বাচনের ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে বলেছে সিন্ডিকেট। পাশাপাশি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্পন্ন করতে ‘পরিবেশ সংসদ’কে পুনরুজ্জীবিত করে ছাত্র সংগঠনসমূহের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার রাতে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বোর্ড সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরু করার সম্মতি পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে রোববার দুপুরের বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। সে অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট এ সিদ্ধান্ত নেয়।’
ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের কয়েকটি মিটিং হয়েছে। দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্রসংগঠনদের নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনা করা হবে।’
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এরই মধ্যে হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের নতুন করে তথ্য হালনাগাদ করতে প্রাধ্যক্ষদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে।’
‘ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে কয়েকটা আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তালিকা হালনাগাদ করার জন্য হল প্রাধ্যক্ষদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি প্রভোস্ট কমিটিকে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটকেও আজকে (গতকাল) বলা হয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হবে, আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
উপাচার্য আরো বলেন, ‘এগুলো কতগুলো নিয়ম-নীতির মাধ্যমে হবে। সেগুলো সুশৃঙ্খলভাবে করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। সিন্ডিকেটও সম্মতি দিয়েছে। আমরাও এ বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে কাজ করছি। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরপরই হল ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার কাজ শুরু হবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় শিক্ষার্থী মারধরে জড়িত ৭ ছাত্রলীগ নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার এবং যৌন হয়রানির দায়ে ৫ ছাত্রকে ২ বছর করে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় তাদেরকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ৬ ফেব্রুয়অরি রাতে ধার দেয়া ক্যালকুলেটর ফেরত চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের ছাত্র এবং দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এহসান রফিককে মেরে রক্তাক্ত করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ওই শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন অংশে মারত্মক জখম হয় এবং বাম চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরের দিন তাকে হল ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে আটকে রাখা হয়। অপকর্মের দায় থেকে মুক্তি পেতে তার বিরুদ্ধে ‘শিবির’ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা হয়। বর্তমানে এহসান গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে অবস্থান করছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহপাঠীর বিরুদ্ধে অশ্লীল মন্তব্য ছড়ানোর দায়ে পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ৫ শিক্ষার্থীকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃতরা হলেন- আশিকুর রহমান, হযরত আলী, মোসতাকিম আল মামুন পিয়াল, মো. জহুরুল ইসলাম এবং রাশেদ আহমেদ। এদের প্রত্যেকেই বিভাগটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।