
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানি ২৫ মার্চ। রবিবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজধানীর বকশীবাজারের বিশেষ আদালতে হাজির করানোর দিন ধার্য ছিল। খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে তিনি হাজিরা দেন তার আইনজীবী।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘বকশীবাজারের আদালতে বিডিআর বিদ্রোহের একটি বিস্ফোরক মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। রবিবার খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে তিনি হাজিরা দেন বলে জানান।
এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদাকে হাজির করার নির্দেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২।
এর আগে কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরার জন্য পুলিশ নিতে এলে তাদের সহায়তা দিতে কারারক্ষীদের একটি দল প্রস্তুত রয়েছে। যেহেতু খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন, সে জন্য আদালত তার হাজিরা পরোয়ানা বা পিডব্লিউ (প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট) কারাগারে পাঠিয়েছেন।
পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী খালেদার কাছে কোন মামলার হাজিরা পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে, তা জানতে শনিবার বেলা তিনটার দিকে কারাফটকে যান খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘জানতে পারলাম বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলায় পিডব্লিউ হয়েছে।’
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় দুদক এ মামলাটি করে।
২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. সামছুল আলম। দুদকের উপ-পরিচালক মো. আবুল কাসেম ওই বছরের ৫ অক্টোবর খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনকে (সিএমসি) বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামির সংখ্যা ১৩ জন। কিন্তু, যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বর্তমানে আসামির সংখ্যা ১১ জন।
আসামিদের মধ্যে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ছাড়া বাকি আসামিরা জামিনে আছেন। তবে গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
রায়ের পর পরই খালেদা জিয়াকে আদালতের পাশে নাজিমউদ্দিন রোডের ২২৮ বছরের পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্জন এই কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে গত ১০দিন ধরে কারাভোগ করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে সেখানকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
কারাগারের আশপাশের বাসিন্দাদের চলতে হচ্ছে ভিন্ন পথে। পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ কাউকে চলতে দিচ্ছে না। চকবাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, কারাগারের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় এলাকার ব্যবসায়ীদের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।