
বিএনপির প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মঙ্গলবার রাতে ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, ঢাকায় মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সহিংসতা করার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে।
ডিএমপির পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আরটিএনএনকে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা কার্জন হলের সামনে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায় এবং পুলিশের হাতে আটক দু’জনকে তারা ছিনিয়ে নেয়।
তাদের হামলায় সাতজন পুলিশ আহত হয়েছে। তারা পুলিশের দুই সদস্যের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করে। সহিংসতার অভিযোগে বিএনপির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বলেন পুলিশ কমিশনার।
বিএনপির নেতা রুহুল কবীর রিজভী আরটিএনএনকে বলেন, গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে বৈঠকের পর সেখান থেকে গাড়িতে করে ফিরে যাওয়ার সময় পুলিশ দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে তুলে নিয়ে গেছে।
বর্তমানে তিনি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
মঙ্গলবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজির হওয়ার পর খালেদা জিয়া বিকেলে বাসায় ফেরার সময় মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এবং সরকার-বিরোধী শ্লোগান দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা কার্জন হলের সামনে রাস্তায় বিক্ষোভ করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ভ্যানগাড়িতে আক্রমণ করে আটক বিএনপির দু’জন নেতাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। পরে পুলিশ বিএনপির ৫০জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করা পুলিশের রুটিন হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির তিনি বলেন, আদালতে দেশনেত্রীর হাজিরার দিনগুলোতে তার গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ ন্যাক্কারজনক হামলা চালাচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটি (হামলা) পুলিশের রুটিনওয়ার্ক হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব দাবি করেন, মঙ্গলবার আদালত থেকে ফেরার পথে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের হিংসাত্মক আচরণ অতীতের সব স্বৈরাচারের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তাদের সভ্যতা-ভব্যতা আর তিলমাত্র নেই। খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে বানোয়াট ও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মামলায় জড়িয়েছে হিংসাপরায়ণ ও ক্ষমতালোভী আওয়ামী লীগ সরকার।
তিনি বলেন, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায় বর্তমান শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু জাতীয়তাবাদী শক্তিকে কখনোই তারা নির্মূল করতে পারবে না।
বিএনপি এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা ও গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল। বিবৃতিতে তিনি গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোনও কারণ ছাড়াই বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর থেকে ঢাকা মহানগর (উত্তর) দক্ষিণ খান থানার ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মিন্নত আলী, দক্ষিণ খান থানা বিএনপির সদস্য হারুন অর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক দল উত্তর খান থানা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, দক্ষিণ খান থানার ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, পল্লবী থানা বিএনপির নেতা সাইদুর রহমান, তুরাগ থানা বিএনপির নেতা বুলু, খোকন সরকার, কবির, রামপুরা থানা বিএনপির নেতা ডল, ঢাকা মহাগর দক্ষিণ কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির নেতা বাবুল, মানিক, চকবাজার থানা বিএনপির নেতা আলামীন, শ্যামপুর থানা বিএনপির নেতা জামান আহমেদ পিন্টু, পল্টন থানা বিএনপির নেতা ইসমাইল হোসেন তালুকদার, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি পেয়ারা মোস্তফা, মহিলা দলনেত্রী আরজু, শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর নেতা জিল্লুর রহমান, আলম, জসিম, আলম দেওয়ানসহ অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া হামলা চালিয়ে গেন্ডারিয়া থানা বিএনপির নেতা আব্দুল কাদের কমিশনার ও শাহবাগ থানা বিএনপি নেতা সুমনসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।