
সদ্য মন্ত্রীসভায় অনুমোদনপ্রাপ্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস করা থেকে বিরত থাকার জোর দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করা হলেও প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারায় হয়রানিমূলক। এ ধারার আওতায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে নতুন করে নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হতে পারেন।
এ আইনে বাকস্বাধীনতাকে অপরাধে পরিণত করা হয়েছে। গণতন্ত্রকামীরাই ক্রিমিনাল হিসেবে অভিহিত হবে। ফিরে যাওয়া হবে মধ্যযুগের অন্ধকারে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, কোনো বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না, প্রশ্ন করা যাবে না, সমালোচনা করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড হবে। আমেরিকার সংবিধানে ১৭৯১ সালে তারা বলেছিল, সংসদ বাকস্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আইন পাস করতে পারবে না। ওটা হল গণতন্ত্র। এটা পনেরশ’, ষোলশ’ এবং সতেরশ’ সালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানিতে বড় বড় রাজারা করতেন।
তারা তখন আইন করতেন রাজার ব্যাপারে, তাদের পুত্র, কন্যা, তাদের ড্রেস ও মুকুটের ব্যাপারে- কোনো বিরূপ মন্তব্য করলে শূলে চড়ানো হবে। হাজার হাজার লোককে মধ্যযুগে শূলে চড়ানো হয়েছে। মধ্যযুগ আর গণতন্ত্রের পার্থক্য হল- গণতন্ত্রে সবাই কথা বলতে পারবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বহুল আলোচিত নিপীড়নমূলক আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭সহ ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’র খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। যা আরও একটি কালো আইন হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এ আইনটি পাস হলে মানুষের বাকস্বাধীনতা বলে কিছুই থাকবে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলেও কিছু থাকবে না।
রিজভী বলেন, সরকারের দুর্নীতি যাতে প্রকাশ না পায় বা কেউ প্রকাশ করতে না পারে সে জন্যই এ আইনটি করা হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া আইনের খসড়ায় কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ সংক্রান্ত ৩২ ধারায় সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হবেন।
অনুমোদন পাওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ‘কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ’ সংক্রান্ত ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কোনো ধরনের গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা সংরক্ষণে সহায়তা করেন তাহলে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। আর এই অপরাধ যদি একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার করেন বা বারবার করেন তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
এই আইনকে মধ্যযুগীয় অমানবিক মানবতাবিরোধী আইন উল্লেখ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের উদ্যোগের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রুহুল কবির রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আসাতুল কবির শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।