
শতবর্ষে সাদুল্লাপুর বহুমূখী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। ‘শতাব্দীর আহবানে এসো মিলি প্রাণের টানে’ এই শ্লোগানে প্রাচীন বিদ্যাপীঠের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব উদযাপন হয়।আজ ২৮ জানুয়ারী রবিবার গৌরবময় শতবর্ষের বর্ণিল অনুষ্ঠানকে ঘিরে যেন সাজসাজ রব উঠেছে উপজেলা জুড়েই। তাইতো উৎসবের আমেজ এখন সবার প্রাণ দোলছে আনন্দে। গত কদিন থেকে সাদুল্যাপুর শহর সেজেছে বর্ণিল সাজে। বিভিন্ন স্থানে নির্মিত হয়েছে সুদৃশ্য তোরণ। মাঠের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। চারদিকে ব্যানার, ফেস্টুন আর প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণজুড়ে ঝলমলে আলোকসজ্জা জানান দেয় জমকালো উৎসব আবহের কথা।
দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বিদ্যাপীঠের সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মহামিলন মোহনায় পরিনত হয়েছে স্কুল প্রাঙ্গণ। পিছিয়ে নেই বিদ্যাপীঠের বর্তমান শিক্ষার্থী-শিক্ষকরাও। সকাল থেকে নবীন-প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে স্কুল প্রাঙ্গণ। দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য উৎসব আয়োজন, মিলন মেলা, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা, খাওয়া-দাওয়া, হৈ-হুল্লোর আর আনন্দ। এছাড়াও আজ সন্ধ্যায় বিশিষ্ট শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
১৯১৮ সালে গাইবান্ধার জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। আলোকিত মানুষ তৈরীর প্রাণকোষ বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি শত বছরের পথের বাঁকে বাঁকে স্বগৌরবে জ্ঞানের আলো বিকিরণ করে যাচ্ছে। একশো বছরে অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, এমপি, শিক্ষক-সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, ক্রীড়াবিদ, মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক খ্যাতিমানদের জন্ম দিয়েছে উক্ত বিদ্যালয়টি।
বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর।
প্রফেসর মো. আব্দুল কাউয়ুমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য ডা. মো. ইউনুস আলী সরকার এমপি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহা-পরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার ও বিশিষ্ট অভিনেতা, ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এজাজুল ইসলাম।
এসময় আরো উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
শতবর্ষ উদযাপন প্রচার উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও সাদুল্যাপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান ফারুক বলেন, ‘যথাযোগ্য মর্যাদায় সুষ্ঠ ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে শতবর্ষ পূতি উৎসব উদযাপনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার মাধ্যমে কাংখিত দিনটি আজ উৎযাপিত হলো। উৎসব সফল করতে উদযাপন কমিটি ছাড়াও সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও দিনরাত কাজ করায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করছি। উৎসবে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সূধি মহল ও গণমাধ্যমকর্মীরা এসময় উপস্থিত হওয়ায় অনুষ্ঠান সফল ও সার্থক করার জন্য আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
তিনি আরো জানান,প্রায় এক বছর আগে শতবর্ষ উৎসব পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর উৎস আয়োজনের দিন ঠিক রেখে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার শেষ দিন ছিলো ৩১ অক্টোবর। পরে উদযাপন কমিটি উৎসব অনুষ্ঠানের দিন পরিবর্তন করে ২৮ জানুয়ারী নির্ধারিত করে। উৎসব অনুষ্ঠানে বিদ্যাপীঠের নিবন্ধন করাসহ কয়েক হাজার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন । এছাড়া উচ্ছাসিত প্রাণে শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবকসহ এলাকার হাজার-হাজার দর্শক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন।
শতবর্ষের সাদুল্লাপুর বহমূখী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় আলোর দিশারী হিসেবে পরিচিত হলেও সরকারী করণ হয়নি আজও। বিদ্যাপীঠটি সরকারী করণের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ-মানববন্ধন, স্বরকলীপি প্রদানসহ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। বর্তমান সরকারের আমলে প্রাচীন বিদ্যাপীঠটি সরকারী করণের জোর দাবী জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ সাদুল্যাপুরবাসী।
এদিকে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানকে ঘিরে চার দফাদাবী আদায়ে এদিন অনুষ্ঠান স্থলে গণস্বাক্ষর কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে কর্মসূচী পালন করে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ।