![]()
কুড়িগ্রামের উলিপুরে আশরাফুল ইসলাম নামের এক কলেজ ছাত্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়ার দেড় মাস পর এলাকাবাসীর কাছে পরিকল্পিত হত্যা কান্ডের কথা স্বীকার করলেন ঘটনার মূলহোতা প্রতিবেশি শফিকুল ইসলাম। পরিবারের অভিযোগ, জনসম্মুখে হত্যা কান্ডের কথা শিকার করলেও পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে শফিকুলকে নিহত কলেজ ছাত্রের পিতাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় আটক দেখিয়ে বুধবার (২৪ জানুয়ারী) জেল
হাজতে প্রেরন করেছেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা গ্রামের বাবলু মিয়ার পুত্র চিলমারী ডিগ্রী কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র আশরাফুল ইসলাম (২০) কে প্রতিবেশি আব্দুল ব্যাপারীর পুত্র শফিকুল ইসলাম (৪৫) গত সাত ডিসেম্বর সকালে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি পাশ্ববর্তি চিলমারী উপজেলার পুটিমারী গ্রামে নিয়ে যান। ওইদিন গভীর রাতে শফিকুল ইসলাম কলেজ ছাত্রের বাড়িতে ফোন করে জানায়, সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুত্বর আহত অবস্থায় আশরাফুল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। খবর পেয়ে স্বজনরা রংপুর হাসপাতালে গেলে আশরাফুলের লাশের সঙ্গে শফিকুলকে দেখতে পান। পরদিন রংপুর কোতয়ালী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়, মামলা নং-২২০। ময়না তদন্ত শেষে স্বজনরা লাশ নিয়ে এলাকায় আসলে লাশের সাথে শফিকুলকে দেখে এলাকাবাসী তাকে আটক করে। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন বাবুল গ্রাম পুলিশ নয়া মিয়া ও হাবিবুরকে পাঠিয়ে তাকে নিজ হেফাজতে নেন। দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর চেয়ারম্যান শফিকুলকে তার স্বজনদের কাছে ফেরৎ দেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের ভূমিকা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নিহত কলেজ ছাত্রের পিতা বাবলু মিয়ার অভিযোগ, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শফিকুল তার ছেলেকে হত্যা করেছে। তার বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও অজ্ঞাত কারনে পুলিশ তা গ্রহন করেনি।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারী) হত্যা কান্ডের দেড় মাস পর শফিকুল ইসলাম কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে দেশীয় অস্ত্র (ছোড়া)সহ নিহত কলেজ ছাত্র আশরাফুলের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মাকে সন্তানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে হুমকি প্রদান করেন। বাকবিতন্ডা ও উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারির এক পর্যায়ে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে শফিকুলকে আটক করলে বাকিরা পালিয়ে যায়। এ সময় আটক শফিকুল ইসলাম নির্মম হত্যা কান্ডের কথা এলাকাবাসীর কাছে স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেন। আটক শফিকুল বলেন, গত সাত ডিসেম্বর সকালে আশরাফুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি পুটিমারী গ্রামে নিয়ে যান। ওই দিন রাতে তিনি ও তার শ্বশুর বাড়ি এলাকার লোকজন মিলে আশরাফুলকে উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের নিরাশির পাতার নামক নির্জন স্থানে এনে ধাঁরালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে উপর্যুপরী মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে শফিকুল মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয় সেখানে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। রাতেই সেখানে তার মৃত্যু হয়।
নিহত কলেজ ছাত্রের ভাই সবুজ মিয়া জানান, হত্যা কান্ডের মূলহোতা শফিকুল ইসলাম শত শত মানুষের উপস্থিতিতে পরিকল্পিত হত্যার কথা শিকার করার পর পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে চাইলে পুলিশ বলে লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মামলা নেয়া হবে। পরে নিহত আশরাফুলের পিতাকে হত্যা চেষ্টা মামলায় শফিকুলকে আটক দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ হত্যা মামলা না নেয়ায় তারা আদালতের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী আয়নাল হক (৫০), আজিজুর রহমান (৪০), গোলাম মোস্তফা (৪৮), নজির হোসেন (৬০), সাইফুল ইসলাম (৩৮), দেলদার (৩২), জাহিদুল ইসলাম (২৮), আজাদ মিয়া (৩০) সহ আরও অনেকেই জানান, শফিকুল হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা জনসম্মুখে স্বীকার করায় তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
বজরা ইউপি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন বাবুল জানান, শফিকুল বাড়ি থেকে আশরাফুলকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর এ দূর্ঘটনা ঘটে। লাশের সাথে শফিকুলকে দেখতে পেয়ে এলাকার লোকজন তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। নতুন করে আরেকটি ঘটনার আশংকায় চকিদার হাবিবুর ও নয়া মিয়াকে পাঠিয়ে তাকে পরিষদে নিয়ে এসে পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করি।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এস কে আব্দুল্যা আল সাইদ জানান, আটক শফিকুল ইসলামকে মঙ্গলবারের (২৩ জানুয়ারী) ঘটনার মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। কলেজ ছাত্র আশরাফুল দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে না তাকে হত্যা করা হয়েছে ময়না তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বিষয়টি পরিস্কার হবে। তখন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।