রাজধানীর সাত কলেজের অধিভূক্তি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও যৌন নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতাদের বহিষ্কার, ঢাবি প্রশাসনের করা নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহার, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ প্রক্টরের পদত্যাগ সহ বিভিন্ন দাবিতে উপাচার্য আখতারুজ্জামানের কার্যালয় ঘেরাও করেছে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি দল।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার্ড ভবনে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রধানকে তাদের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানায়। কিন্তু ভেতর থেকে প্রশাসনিক কর্মীরা ফটক তালাবদ্ধ করে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা লোহার ফটক ধাক্কাধাক্কি করে ভেঙে ফেলেছে।
এর আগে গত বুধবার একই দাবিতে শিক্ষা্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীর কার্যালয় ঘেরাও করে ভাঙচুর করেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুল আহসান খান বাদী হয়ে আজ এই মামলাটি করেন।
এদিকে এই ঘটনা ও রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শাহবাগ থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মঞ্জুর হোসেন মানিক বলেন, প্রক্টরের কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এস এম কামরুল আহসান বাদী হয়ে আজ এই মামলাটি করেন। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন লাখ টাকার সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর বড় সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থানের সময় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রদের হুমকি এবং ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত ও গালাগাল করেন। তারা আন্দোলনের সমন্বয়কারী মশিউর রহমানকে উপাচার্যের কার্যালয়ে মারধরও করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে থানায় সোপর্দ করে। এসবের প্রতিবাদে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। অপরাজেয় বাংলায় মানববন্ধন শেষে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে বিভিন্ন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী ও ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের কার্যালয় ঘেরাও করেন। এ সময় প্রক্টরের কার্যালয়ের দুই পাশের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। তিন শতাধিক ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ওই গেট ভেঙে প্রক্টরের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। প্রক্টর সমাধান দিতে ‘অপারগতা’ প্রকাশ করলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।