মুসলিম প্রধান জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকায় মোতায়েন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের খতম করার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সরকার। ফলে সেখানে স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান আরো তীব্র করা হবে বলে এক সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে জানিয়েছেন।
কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ১৫ নভেম্বর দিল্লিতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে ওই নির্দেশ দেয়া হয়। সম্প্রতি কাশ্মির উপত্যকায় সহিংসতার হার বেড়ে গেছে এবং জঙ্গিরা নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যকে হত্যা করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিতারামন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান আগের চেয়ে অনেক কঠোর করা হবে। উপত্যকায় স্থায়ী শান্তি আনার প্রচেষ্টা হিসেবে সরকার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে ধনেশ্বর শর্মাকে বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগ দিলেও দমন অভিযান চলবে।
নিরাপত্তা বাহিনী ইতোমধ্যে কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গি বিরোধী অভিযান জোরদার করেছে।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিচালক এসপি ভাইদ সম্প্রতি বলেন, চলতি বছর নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ১৭০ জনের মতো জঙ্গিকে হত্যা করেছে।
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)’র মহাসচিব ড. ইউসাফ বিন আহমদ আল-উসামিন কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার লাভের সংগ্রামের প্রতি সংস্থার পূর্ণ সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন।
পাকিস্তান কনস্যুলেটের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার জেদ্দায় যৌথভাবে আয়োজিত এক সেমিনার এবং ছবি প্রদর্শনীতে তিনি এ মন্তব্য করেন। মহাসচিব কাশ্মীরি জনগণের বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগ বন্ধ করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের কনসাল জেনারেল শাহরিয়ার আকবর খান বলেন, ১৯৪৭ সালে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর অবৈধ অনুপ্রবেশের স্মরণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিনি ভারতীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে কাশ্মীরি জনগণকে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
‘কাশ্মীরি জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি’ সৈয়দ ফয়েজ নকশবন্দি শ্রোতাদের ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের বিরাজমান পরিস্থিতি এবং অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অবগত করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ওআইসিকে কাশ্মীরিদের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন প্রদানের আহ্বান জানান।
সমাপনী বক্তব্যে সৌদি আরবে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত খান হাশেম বিন সিদ্দিক কাশ্মীরি জনগণের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করার জন্য ওআইসি এবং সৌদি আরবকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি ভারতের দখলদারিত্বে কাশ্মীরে জনগণের দুর্দশা তুলে ধরে ভারত যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে বাধ্য হয় সে উদ্যোগ গ্রহণ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কাশ্মীরি জনগণকে তাদের ঐতিহাসিক সংগ্রামে পাকিস্তান নৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাবে।
কাশ্মীর কমিটি জেদ্দার সদস্যরা একটি প্রস্তাব পেশ করে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে প্রয়াস দ্বিগুণ করার জন্য ওআইসির প্রতি আহ্বান জানান।
গত পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত ভিত্তিতে অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে ছবি প্রদর্শনী ও সেমিনার হচ্ছে।
এবারের অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আল-আলিম, ওআইসি মহাসচিবের জম্মু ও কাশ্মীর বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি, সৌদি কর্মকর্তা, কূটনৈতিক কোরের সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
পাকিস্তান কনস্যুলেট চলতি বছর কাশ্মীর কালো দিবস উপলক্ষেও একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।