জিম্বাবুয়ের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনী রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, তাদের এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে ঘিরে থাকা ‘অপরাধীদের দলকে’ লক্ষ্য করে। তবে ৯৩ বছর বয়সী মুগাবে ও তার পরিবার ‘সুস্থ ও নিরাপদে’ আছেন। খবর বিবিসির।
এই অভিযান শেষ হলেই দেশে দ্রুত ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ ফিরে আসবে বলে ওই বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেন সেনাবাহিনীর ওই মুখপাত্র। ক্ষমতাসীন দলের টুইটার একাউন্টকে উদ্ধৃত করে বার্তা দেয়া হয় যে সেনাবাহিনীর এই র্নিয়ন্ত্রণ ‘রক্তপাতহীন রূপান্তর’।
প্রেসিডেন্ট মুগাবে গত সপ্তাহে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে বরখাস্ত করলে এই রাজনৈতিক সঙ্কটের সূচনা হয়। এমারসন নানগাগওয়াকে এতদিন প্রেসিডেন্ট মুগাবের উত্তরসূরী ভাবা হলেও সম্প্রতি তার জায়গায় ফার্স্ট লেডি গ্রেস মুগাবের নাম সামনে চলে আসে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল বিবৃতিতে বলেন, এটা কোনো অভ্যুত্থান নয় এবং মুগাবে নিরাপদে আছেন।
তবে প্রেসিডেন্ট মুগাবে কোথায় আছেন সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। মুগাবে নিজেও কোনো বার্তা দেননি। এর আগে দেশটির সামরিক প্রধান সতর্ক করে দেন যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির আসান করতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপের জন্য প্রস্তুত।
এরপর ক্ষমতাসীন দল তার আচরণকে ধৃষ্ঠতা হিসেবে মন্তব্য করেছিল। এদিকে জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারে-তে আমেরিকান দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মীকে বাড়ির ভেতর অবস্থানের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। সেখানে অবস্থানরত সকল মার্কিন নাগরিককে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থানের জন্য বলা হয়েছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে বলা হয় দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
রবার্ট মুগাবের নিয়োগ ‘পুনর্বিবেচনা’ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
এর আগে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শুভেচ্ছা দূত নির্বাচিত করায় সমালোচনার ঝড় উঠার প্রেক্ষাপটে সংস্থা তার নিয়োগ ‘পুনর্বিবেচনা’ করছে।
সমালোচনার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে তাদের শুভেচ্ছা দূত নিয়োগের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন প্রধান ড. টেড্রোস গেব্রেয়াসুস। জনস্বাস্থ্য বিশেষ করে সংক্রামক নয় এমন রোগ ঠেকাতে ও ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে’ জিম্বাবুয়ের সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মকা-কান্ডের প্রশংসা করেছেন তিনি।
ইথিওপিয়ার নাগরিক টেড্রোস আফ্রিকা থেকে নির্বাচিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রথম শীর্ষ নির্বাহী। বুধবার তিনিই সংক্রামক নয়এমন রোগ ঠেকাতে অবদান রাখায় মুগাবেকে সংস্থার শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ দেন।
এ নিয়োগের পর ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র হতাশা ব্যক্ত করেছে। বিস্ময় প্রকাশ করে ব্রিটেন বলেছে, রবার্ট মুগাবেকে দূত নিয়োগ করার ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনেক ভালো কাজ আড়াল হয়ে যাবার আশংকা আছে।
সমালোচকেরা বলছেন, মুগাবের নিজের দেশে মানুষের অধিকারের যে অবস্থা তা বিবেচনা করলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমন গুরুত্বপর্ণ পদে মুগাবেকে মনোনয়ন দেয়াটা হতাশাজনক সিদ্ধান্ত এবং এতে সংস্থাটির ঐতিহ্য ম্লান হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে কেউ কেউ।
জিম্বাবুয়ের বিরোধী দল ও ক্যাম্পেইন গ্রুপগুলো বলছে এমন সিদ্ধান্ত এক ধরনের রসিকতা।
তবে, মুগাবের এই মনোনয়নটিকে রবার্ট মুগাবের জন্য একটি ইতিবাচক বিষয় বলে ব্যাখ্যা করেছেন মুগাবের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র মাজি-উইসা।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধ আর নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশের প্রায় ভেঙে পড়া অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্যেও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তিনি একজন অবিসংবাদিত নাম। বিভিন্ন রকমের কঠিন পরিস্থিতিতেও তার সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে তিনি সবচেয়ে ভালো করার চেষ্টা করেছে।
জিম্বাবুয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ও অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে মুগাবেকে দায়ী করে আসছে। দেশটির স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাপনাও সন্তোষজনক নয় বলে সমালোচকরা বলে আসছেন।
মুগাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণত শুভেচ্ছা দূত হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত মানুষদেরই বেছে নেয়। যেমন- চলচ্চিত্র তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, টেনিস তারকা রজার ফেদেরার জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত হয়ে কাজ করেছেন।
কিন্তু ৯৩ বছর বয়সী রবার্ট মুগাবের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নিয়োগের ঘোষণার পর অনেকেই মনে করছেন , একনায়কতান্ত্রিক শাসক আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য পশ্চিমা জগতে যার দুর্নাম রয়েছে, তাকে শুভেচ্ছা দূত করাটা যথার্থ সিদ্ধান্ত হয়নি।
জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে ‘নিখোঁজ’
এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে খবর প্রকাশিত হয়, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট নিখোঁজ হয়েছেন বলে ধারণা করছে জিম্বাবুয়েবাসী। তিনি কোথায় আছেন এ সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। এ নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।
দীর্ঘদিনের শাসক ৯২ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে গত সোমবার এক সফরে ভারতের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করেন। সেখানে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্ব সাংস্কৃতিক উৎসবে তার যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
প্রেসিডেন্ট মুগাবে বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী নেতা এবং তিনি ৩৬ বছর যাবত জিম্বাবুয়ে শাসন করছেন।
সরকারি বরাতে জানা গেছে সোমবার তিনি ভারতের উদ্দেশে জিম্বাবুয়ে ছেড়ে গেছেন। কিন্তু বুধবার তার মুখপাত্র জর্জ চারাম্বা জানান, ‘ভারতে অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে তিনি এ সফর বাতিল করে জিম্বাবুয়ে ফিরে আসছেন। ’
কিন্তু তারপর থেকেই তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই এই রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যেতে পারেন। সেখানে তিনি এর আগেও চিকিৎসা নিয়েছেন।
২০১১ সালে উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া তারবার্তায় উল্লেখ করা হয় তিনি অন্ত্রের ক্যান্সারে আক্রান্ত। তবে তাকে দেখে বোঝা যায়নি যে তিনি এ রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
জিম্বাবুয়ের এক প্রফেসর তার টুইটার একাউন্টে লিখেন, ‘প্রেসিডেন্ট মুগাবে যেহেতু ইন্ডিয়া যাননি আবার জিম্বাবুয়েতেও নেই তবে কোথায় তিনি? বিষয়টি খুবই রহস্যজনক।’
অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্টেকে ফেরত চাই।’
কিছুদিন আগে মুগাবে জানিয়েছিলেন তিনি ক্ষমতায় থেকে তার একশত বছর পূর্ণ করতে চান।