
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে রংপুরে বেড়ে চলেছে দলীয় কোন্দল। আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন নিয়ে খোদ এরশাদ পরিবারেও এ কোন্দল দেখা দিয়েছে। মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফিজার রহমান মোস্তফাকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেখায় এখন চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে এরশাদ পরিবারে।
বড়আব্বা এরশাদের প্রতি নাখোশ হয়ে জাপার মনোনীত প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আসিফের এমন অনড় অবস্থানে দ্বিধাদ্বন্দে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে স্থানীয় জাপার নেতা-কর্মীরা।
দলীয় নেতা-কর্মীরা অতীতের মতোই সঙ্গে আছেন বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় জাপার যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক এমপি হোসেন মকুবল শাহরিয়ার আসিফ। তার বড়আব্বা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই জাতীয় পার্টির সবকিছু নন বলেও মনে করেন তিনি। আসিফ বলেন, এখন পার্টির চেয়ারম্যানই সব কিছু নন। কারন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদও রয়েছেন। তবে আমি ভোট করবোই।
এদিকে, সাত মাস বিশ দিন আগে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে মহানগর জাতীয় পার্টির কাউন্সিল অধিবেশনে মোস্তফিজার রহমান মোস্তফাকে হাত উঁচিয়ে সিটি মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন এরশাদ। শুধু তাই নয়, রসিক নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে অন্তত ২০ টি সভা সমাবেশ ও সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় মোস্তফার মনোনয়নের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন। তার পক্ষে ক্যাম্পেইন করে ভোট প্রার্থনার কাজটি করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ।
১৮ মার্চ পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে মোস্তফাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার দুই মাসেরও বেশি সময় পর ১৪ জুন এরশাদের পৈত্রিক নিবাস রংপুর মহানগরীর সেনপাড়ার স্কাইভিউ লাঙ্গল ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী নিয়ে দলীয় চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন ছোট ভাই মরহুম মোজাম্মেল হক লালুর ছেলে কেন্দ্রীয় জাপার যুগ্ম মহাসচিব, জেলা জাপার তৎকালীন সদস্য সচিব সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ।
ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দলীয় ষড়যন্ত্রকারী দাবি করে তার বিরুদ্ধে বিষোদাগার করেন। হঠাৎ আসিফের এমন ঘটনার পর আকাশে ভাসছিলো আসিফ শাহরিয়ারকে জাতীয় পার্টির সকল পদ পদবি থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে এমন উড়োখবর।
তবে সেটা না হলেও উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০ জুন এরশাদ রংপুর জেলা আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে দলের অন্যতম প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক করেন। এর মাধ্যমে এই জেলা জাপার আহ্বায়ক কমিটি থেকে বিদ্রোহকারী ভাতিজা আসিফ বাদ পড়ে যান।
এরপর থেকে আসিফ শাহরিয়ার দলীয় চেয়ারম্যান এরশাদসহ পার্টির অন্য কারো ছবি ও লাঙ্গলের প্রতীক ছাড়া এবং দলীয় পদপদবি বাদ দিয়ে নগরীর আনাচে কানাচে মেয়র পদে প্রার্থীতা করতে প্রচারণা চালান। লাগান উন্নতমানের ফেস্টুন, বিলবোর্ড পোস্টার। একারনে নগরীতে এবং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের বিভাজন তৈরি হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত জাপার তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সমর্থকদের বেশির ভাগই এরশাদের মনোনীত প্রার্থী মোস্তফার সঙ্গেই রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ জানান, আমি আগে থেকেই জানতাম আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিন্দ্বিতা করবো। সে কারণে আমি আমার প্রচারণায় পার্টির কোন পদ পদবি ব্যবহার করিনি। এসময় ক্ষুদ্ধ মেজাজে আসিফ বলেন, এখন পার্টির চেয়ারম্যানই সব কিছু নন। কারন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদও রয়েছেন। জানিনা তারা বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছেন। তবে আমি ভোট করবোই।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী মোস্তফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ স্যার দলীয় স্বার্থকে উর্ধে তুলে আমাকে এই মনোনয়ন দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মী সমর্থক এবং আমার ভোটারদের আশির্বাদে আশা করি আমি লাঙ্গল প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে পারবো।
মোস্তফা আরো বলেন, স্যারের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার তার প্রচারণায় দলীয় কোন পদপদবি ব্যবহার করছে না। কেউ একা একা নির্বাচন করতেই পারে সেটা তার অধিকার। তবে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী সমর্থক শুভানুধ্যায়ী সব আমার পক্ষে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, আগামী ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচন। ইসির ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২২ নভেম্বর। আপিল দায়ের ২৫-২৬ নভেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ৪ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার।
রংপুর সিটি করপোরেশনে বর্তমানে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১৯৬টি, ভোটকক্ষ ১ হাজার ১৭৭টি। পাঁচ বছর আগে রংপুর সিটিতে ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। সেই নির্বাচনে প্রথম সিটি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। এবার এ সিটিতে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন হলেও দলীয় প্রতীকে এটি হবে প্রথম নির্বাচন।