তালেবান বিদ্রোহীদের হারিয়ে আফগানিস্তানে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে দেশটিতে সৈন্য সংখ্যা বাড়াতে রাজি হয়েছেন ন্যাটোর সামরিক জোটের নেতারা। তারা জানিয়েছেন, আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দিতে আরো ৩,০০০ সেনা পাঠানো হবে।
ন্যাটোর নতুন সৈন্যরা সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিয়ে এরা আফগান সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিবে। আফগানিস্তানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণা অনুসারে পাঠানো নতুন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আমেরিকান বাহিনীর পরিপূরক হিসেবে এরা কাজ করবে। খবর সাউথ এশিয়ান মনিটরের।
ন্যাটোর মহাসচিব জেন স্টলটেনবার্গ মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে করে আফগানিস্তানের অচলাবস্থা দূর করা যায়। আমরা তালিবানদের কাছে, বিদ্রোহীদের কাছে বার্তা পাঠাতে চাই যে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী হতে পারবে না।’
৮ নভেম্বর থেকে ব্রাসেলসে শুরু হওয়া ন্যাটো প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের দুই দিনের বৈঠকে এই নতুন সৈন্য মোতায়েন অনুমোদন দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের শুরু থেকে মোতায়েন শুরু হবে বলে ন্যাটোর একজন কর্মকর্তা জানান।
নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার জন্য দায়ি আল-কায়েদা জঙ্গিদের আশ্রয়দানকারী তালিবান শাসকদের উৎখাত করতে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এরপর ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশটিকে স্থিতিশীল করা যায়নি। তবে এবার নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে বিদ্রোহীদের পরাজিত করে দেশটিকে স্থিতিশীল করতে চায় পশ্চিমারা।
স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করা কত গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝা যায় মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) কাবুলের একটি টেলিভিশন স্টেশনে জঙ্গি হামলা থেকে।’ দায়েশ এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে, তবে সেক্ষেত্রে তারা কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
ন্যাটোতে ট্রাম্পের দূত ক্যায় বেইলি হাচিনসন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হল তালেবান জঙ্গিদের দেখানো যে তারা সামরিক যুদ্ধে জয়ী হতে পারেনি এবং পারবে না।
আফগানিস্তান নিয়ে আগস্টে ঘোষিত ট্রাম্পের কৌশলের মূল বিষয়গুলো ছিল আরো মার্কিন সৈন্য পাঠিয়ে আফগান সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করা, ভারতের মতো আঞ্চলিক সহযোগীদের সহযোগিতা নেওয়া এবং পাকিস্তানের প্রতি আরো কঠোর হওয়া।
মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তালিবান ও অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠীকে পাকিস্তান আশ্রয় দিচ্ছে। তবে, ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তালেবান ও কাবুলের পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতার জন্য বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা চালানো হলেও সবগুলো ব্যর্থ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তালেবানদের আলোচনার টেবিলে আনতে ব্যর্থ হলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কঠিন।
ন্যাটোর মিত্ররা ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান সেনা তহবিলে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার চাঁদা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ট্রাম্পের কৌশল মেনে নিয়ে ন্যাটো আরো সৈন্য পাঠাচ্ছে বলে কূটনীতিকরা মনে করেন।