মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১২দিনের এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে বুধবার বেইজিং পৌঁছেছেন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই চীনে পৌঁছালেন তিনি। সফরকালে উত্তর কোরিয়া বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার এশিয়া সফরের মধ্যে এটিকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প বেইজিং অবতরণের পর শি তাকে অভ্যর্থনা জানান।
বেইজিং পৌঁছার আগে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসন বেইজিংকে উত্তর কোরিয়ার মূল নিয়ন্ত্রণকারী বলে বিবেচনা করে। দেশটির অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকা এবং ৯০ শতাংশ বাণিজ্যের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল।
এর আগে ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্টের প্রশংসা করেছিলেন। তিনি জানান, শির বড় ধরনের রাজনৈতিক জয়ের পর সাক্ষাতের জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি।
শিকে অভিনন্দন জানালেও উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে উভয় রাষ্ট্র প্রধানের মধ্যে উত্তেজনাও রয়েছে। নির্বাচনি প্রচারণার শুরু থেকেই বাণিজ্যে অসমতা নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আসছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া চীনা সম্রাটদের শহর পরিদর্শন করবেন। সেখানে তারা চা চক্রে অংশগ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পারমাণবিক ও পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। চীন দেশটির একমাত্র আন্তর্জাতিক মিত্র।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম এশিয়া সফরে পাঁচ দেশ ভ্রমণে বের হয়েছেন ট্রাম্প। এর আগে তিনি জাপান সফর শেষে দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এদিন চীনে পৌঁছান।
চীন ভ্রমণের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া ট্রাম্প নিষিদ্ধ শহর হিসেবে পরিচিত লাসা পরিদর্শন করেন। সেখানে ট্রাম্প দম্পত্তি চীনের ঐতিহ্যবাহী পিকিং অপেরা পরিবেশনা উপভোগ করেন। এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন শি দম্পত্তি।
কোরিয় উপত্যকায় শান্তির ব্যাপারে আশাবাদী ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছান। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন তাকে প্রেসিডেন্ট ভবনে স্বাগত জানান।
উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরিয়ে আনার বিষয়টি তার সফরে মূল বিষয় হিসেবে প্রাধান্য পাবে বলে জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি আশা করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ওই অঞ্চলে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তা শান্তিপূর্ণভাবে প্রশমন করা সম্ভব হবে। এই বিষয় নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন বলেও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট ভবনে ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন আশা প্রকাশ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সফর উত্তর কোরিয়াকে ঘিরে তৈরি হওয়া উত্তেজনা প্রশমনের একটি সুযোগ।
‘আমি জানি আপনি আপনার নিরাপত্তা বিষয়ক এজেন্ডায় এই বিষয়টি সবচেয়ে আগে রেখেছেন’, ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন মুন।
এর আগে ১২ দিনের এশিয়া সফরের দ্বিতীয় ধাপে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের উপকণ্ঠে ওসান বিমান ঘাঁটিতে দুপুরের দিকে অবতরণ করেন। সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউং-হোয়া তাকে শুভেচ্ছা জানান।
পরে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে তিনি সিউলের প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ক্যাম্প হাম্পরিসে যান। ক্যাম্প হাম্পরিস হচ্ছে পিয়ংতায়েকে নতুন করে সংস্কার করা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাঁটি। প্রেসিডেন্ট মুন এ সামরিক ঘাঁটিতে ট্রাম্পকে ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানান।
ক্যাম্প হাম্পরিসে দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউএস ফোর্সেস কোরিয়ার (ইউএসএফকে) সদস্যদের সঙ্গে এ দুই নেতা দুপুরের খাবার খান। ক্যাম্প হাম্পরিসকে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি হিসেবে দেখা হয়।
মার্কিন এ সামরিক ঘাঁটি নির্মাণে ১০.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। এই বিশাল অংকের ব্যয়ের ৯০ শতাংশের বেশী দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বহন করে বলে জানা যায়।
প্রেসিডেন্ট মুন সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরকে বলেন, তারা দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন জোটের ভিত্তি এবং ভবিষ্যত। তিনি কোরীয় উপদ্বীপের শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্যে তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সেখানে কোরীয় উপদ্বীপের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ব্যাপারে ট্রাম্পকে অবহিত করা হয়। পরে ট্রাম্প ব্লু- হাউজে মুনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে হেলিকপ্টারে করে রওনা হন। মুনও পৃথক একটি হেলিকপ্টার যোগে সিউলে তার দপ্তরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এশিয়া সফরে এসে এখনো পর্যন্ত ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া ও তার নেতা কিম জং উনের বিরুদ্ধে অগ্নিগর্ভ ভাষা ব্যবহার করেননি। এর আগে তিনি প্রয়োজনে উত্তর কোরিয়াকে ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। এছাড়া কিম জং উনকে তিনি ‘লিটল রকেট ম্যান’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
তবে এশিয়া সফরে প্রথম দেশ হিসেবে জাপানে গিয়ে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে তিনি ‘সভ্য বিশ্ব, আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি’ বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়া যেন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে না পারে তার প্রস্তুতি হিসেবে কংগ্রেসের কাছে আরো চার বিলিয়ন ডলার চেয়ে সোমবার একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দক্ষিণ কোরিয়া সফর শেষে ট্রাম্পের চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন্স সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।