
তিন মাস দেশের বাইরে অবস্থান শেষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই দেশের মাটিতে পা রাখলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বুধবার বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাকে বহনকারী বিমানটি।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দর থেকে রওয়ানা করেন তিনি। সেখানে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ হাজারো নেতাকর্মী বিদায় জানান খালেদা জিয়াকে।
এদিকে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকেই বিমান বন্দর এলাকায় অবস্থান নেন দলটির নেতাকর্মীরা। দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকার নেতাকর্মীরাও এই অভ্যর্থনায় অংশ নেন।
বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে রাস্তার পাশে মানবপ্রাচীর তৈরি করেন তারা। বিএনপি চেয়ারপারসনকে এক নজর দেখতে সাধারণ জনতাও অংশ নেন বিএনপির এই অভ্যর্থনায়।
চিকিৎসার জন্য লন্ডনে তিন মাসের বেশি সময় অবস্থান করলেও রাজনৈতিকভাবে খালেদা জিয়ার এই সফরের গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা। দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েই বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরলেন- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজাতে যাবেন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ যাত্রার এই ধকল সামলাতে বাসায় পৌঁছে তিনি বিশ্রাম নেবেন। শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকেই তিনি ব্যস্ত সময় কাটাবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দিতে যাবেন তিনি। এরপরই দলীয় কর্মপন্থা ঠিক করতে নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন।
চারটি মামলায় আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই খালেদা জিয়া দেশে ফিরেছেন। এজন্য আইনি বিষয়গুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবেন তিনি। অন্ততপক্ষে মামলাগুলোর বিষয়ে আপডেট নেয়া, মামলার পরিস্থিতি, কোন মামলায় হাজিরা দিতে হবে এসব বিষয়ে দলীয় আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এক্ষেত্রে এই পরামর্শসভা আগামী সপ্তাহের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ যাত্রার ধকল এবং বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরা দিয়ে ক্লান্ত থাকবেন খালেদা জিয়া। তাই শুক্রবার বিশ্রাম নিতে পারেন তিনি। শনিবার কার্যালয়ে যেতে পারেন দলীয় চেয়ারপারসন। তবে শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকলে কার্যালয়ে বসতে আরো সময় নিতে পারেন তিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকতে পারেন খালেদা জিয়া। সহায়ক সরকারের রূপরেখা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রধান বিচারপতিকে কেন্দ্র করে বিচার বিভাগের জটিলতা, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। এ সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হতে পারে।
নির্ভরযোগ্য একাধিক নেতা জানিয়েছেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠক আলাদাভাবে না হলে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বসবেন খালেদা জিয়া। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভাও ডাকা হতে পারে। তবে পরিস্থিতি বুঝে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টিও নাকচ করেনি কোনো সূত্র। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের নেতাদেরও ডাকতে পারেন তিনি।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলের সিনিয়র নেতারা তার গুলশানের বাসভবনে যেতে পারেন। সেখানেই দলের আদ্যোপান্ত রিপোর্ট নেবেন। এক্ষেত্রে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কাছ থেকে সব পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেবেন।
দলের আরেকটি সূত্র জানায়, বিএনপির থেমে থাকা কিছু বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা জিয়া। স্থায়ী কমিটির তিনটি শূন্যপদে মনোনীতদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন তিনি। এছাড়া ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়েও নির্দেশনা দিতে পারেন। তবে সবকিছুর বাইরে সহায়ক সরকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপির অবস্থান চূড়ান্ত করবেন। এক্ষেত্রে দলের বুদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন খালেদা জিয়া।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের অগ্রগতি নিয়ে ফরেন উইংয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন খালেদা জিয়া।
যদিও খালেদা জিয়া ফেরার পর সুনির্দিষ্ট করে ঠিক কী কাজগুলো করবেন, এ নিয়ে দলের কোনো নেতাই মন্তব্য করতে রাজি হননি।