
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়াসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হবে।
শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একদিকে জনগণকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে পর্যুদস্ত করতে পারলেই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকার মনোবাঞ্ছা পূরণ হবে ভেবেই সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হয়রানি করতে নানা কারসাজিতে মেতে উঠেছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করতে সকল শক্তি নিয়োগ করেছে বর্তমান সরকার। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে আদালতকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে লাগাতারভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে সরকার হতাশ ও দিশেহারা হয়ে গেছে বলেই প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বিতাড়ণের কুপন্থা অবলম্বন করায় সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষুব্ধতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। সেজন্য জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকার ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে যাচ্ছে।’
খালেদার বিরুদ্ধে আক্রোশমূলক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় দেশবাসী ক্ষুদ্ধ ও স্তম্ভিত। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিহিংসার পরিণতি হয়েছে অস্বাভাবিক। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে রাজনৈতিক সমাধান হবে না; বরং দেশকে নিয়ে যাওয়া হবে চরম নৈরাজ্যের দিকে।’
তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একই দিনে দুর্নীতি ও জাতীয় পতাকার মানহানি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিবাদে দেশব্যাপী শনিবার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সস্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেদের মত করে এই কর্মসূচি পালন করবেন। কেউ প্রতিবাদ মিছিল করবেন, কেউ বিক্ষোভ মিছিল করবেন।’
ঢাকা মহানগরীতেও একই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান রিজভী।
বিএনপির এই নেতা অবিলম্বে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিলের দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সরকারের ওপর মহলের নির্দেশে হচ্ছে। ২০১৪ সালের মত আরেকটি একতরফা নির্বাচন করার জন্য কূটচালের অংশ হিসেবে এমনটা করা হচ্ছে।’
খালেদা জিয়াকে হয়রানি করে দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে হাজির না থাকায় বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান।
একই দিন স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানির অভিযোগে দায়ের আরেক মামলায় সমন জারির পরও আদালতে না আসায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার মহানগর হাকিম নূর নবী।
এছাড়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুই বছর আগে বাসে পেট্রল বোমা মেরে আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় গত সোমবার খালেদা জিয়াসহ ‘পলাতক’ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলেনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালি, দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া, বিএনপি নেতা এম এম মালেক, কাজী আবুল বাশার, আব্দুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।