
দীর্ঘ ১১ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেশের মাটিতে লড়াইয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। তাই ঢাকা টেস্টকে স্মরণীয় করার স্বপ্ন ছিল মুশফিক বাহিনীসহ টাইগার সমর্থকদের। হলোও তাই। ঘরের মাঠে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের পর আরেক পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০ রানের ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে টাইগাররা। তবে এবার বাংলাদেশের স্বপ্ন আরো বড় কিছুর। ট্রফিতে ভাগ বসাতে রাজি নয় টাইগাররা। আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টেও জয় দিয়ে সিরিজ জয় করতে চায় সাকিব-তামিমরা।
উপমহাদেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড মোটেও ভালো নয়। ২০১১ সালের পর উপমহাদেশের মাটিতে কোনো টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি অসিরা। এরমধ্যে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দু’বার হোয়াইটওয়াশও হয় অস্ট্রেলিয়া। ভারত ও শ্রীলংকার কাছে চার ও তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় অসিরা। তাই অস্ট্রেলিয়ার জন্য এই সিরিজে সমতা আনা হবে চ্যালেঞ্জিং।
অস্ট্রেলিয়া এবার বুঝেছে, শেষ ম্যাচটি কতটা কঠিন হতে যাচ্ছে তাদের জন্য। এজন্য ঢাকা টেস্টে চোট পাওয়া হ্যাজলউডের পরিবর্তে তারা উড়িয়ে এনেছে তাদের নিষিদ্ধ করা স্পিনার স্টিভ ও’কিফ কে। এমনিতে ফাস্ট বোলিংটা অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের রক্তে মিশে আছে। কন্ডিশন যেটাই হোক, দেশে কিংবা বিদেশে, অস্ট্রেলিয়া দল তাদের পেস বোলারদেরই বেশি ব্যবহার করেছে। পেস বোলিংটা তাদের কাছে আর্ট। সুইং বাউন্সে বিপক্ষে দলকে ঘায়েল করাই যেন তাদের পণ।
কিন্তু ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের কাছে ২০ রানে হেরে এবার হয়তো উল্টো পথে হাটার কথা ভাবছে অস্ট্রেলিয়া। স্পিন কন্ডিশনের কথা ভেবে অজি দলে কমতে পারে এক পেসার। তাহলে প্রথাগত রীতি ভেঙ্গে এক পেসার কমিয়ে অস্ট্রেলিয়ার একাদশে থাকতে পারে ৩ স্পিনার ও ১ পেসার! যদি এমনটি হয়, তাহলে ৪০ বছর পর ভাঙ্গতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার এই কম্বিনেশন। কারণ ৪০ বছর আগে ১৯৭৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১ ফাস্ট বোলার ও ৩ স্পিনার খেলিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার নিয়মিত কম্বিনেশনে এশিয়ায় দুই স্পিনার ও এশিয়ার বাইরে এক স্পিনার থাকে।
শেষ টেস্ট ম্যাচ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যে চাপের মধ্যে আছে তা পরিস্কার হয়েছে স্মিথের বক্তব্যে। কারণ চট্রগ্রাম টেস্ট হারলেই যে টেস্ট র্যাংকিংয়ে স্মিথদের নেমে যেতে হবে ছয়ে।
তাই ঢাকা টেস্টের মত ভুল করতে চাইছেন না অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। অনেক ভালো খেলেই রুখে দিতে চায় বাংলাদেশকে। তবে অস্ট্রেলিয়া দল যে চাপে আছে তা স্মিথের কথায় পরিস্কার।
চট্রগ্রামে অনুশীলনের আগে সংবাদ সম্মেলনে অজি ক্যাপ্টেন স্মিথ জানান, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সব সময়ই চাপের। আমরা এখন ১-০ তে পিছিয়ে আছি, সমতায় শেষ করতে হলে জিততেই হবে। তাহলে গত সপ্তাহের চেয়ে অনেক ভালো খেলতে হবে আমাদের। আগের ম্যাচটি জিতে বাংলাদেশ অবশ্যই আত্মবিশ্বাসে থাকবে। তবে আমাদের অনেক ভালো খেলতে হবে।’
ঢাকা টেস্ট শুরুর আগে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা থাকলেও অস্ট্রেলিয়া সেটিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। তবে ২০ রানে প্রথম টেস্ট হেরে, প্রস্তুতি ম্যাচের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন স্মিথ। তিনি জানালেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলে অবশ্যই ভালো হতো। তবে এটিকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো ঠিক হবেনা। আমরা নিজেদের কাজ ঠিকমত করতে পারিনি, যতটা ভালো খেলতে পারতাম, ততটা পারিনি। তাই বাংলাদেশের কাছে আমাদের হারতে হয়েছে।’
এদিকে দীর্ঘদিনে ঐতিহ্য ভাঙ্গতে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া। সাধারণত টেস্টের আগের দিনেই অস্ট্রেলিয়ার একাদশ ঘোষণা করা হয়। তবে এবার চাপের কারণে এখনো টেস্ট একাদশ ঘোষণা করেনি ক্যাঙ্গারুরা। একাদশ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্মিথ জানালেন, একাদশ নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা কাল টসের সময়েই একাদশ জানাব। আমাদের আরো একবার উইকেট দেখা দরকার। সেটি দেখেই আমাদের একাদশ নির্বাচন করবো।’
অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্য অনুযায়ী, টেস্ট শুরু হওয়ার আগের দিনেই একাদশ জানিয়ে দেয় তারা। এমনকি মাঝে মাঝে টেস্ট শুরুর দুদিন আগেও একাদশ জানিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। এটা তাদের ঐতিহ্য। মিরপুর টেস্টেও এই রীতির মধ্যে ছিল অস্ট্রেলিয়া।
তবে চট্রগ্রাম টেস্টের আগে সেই রীতি থেকে পিছু হটেছেন ক্যাঙ্গারুরা। আজ সংবাদ সম্মেলনে টেস্টের আগের দিন একাদশ না জানিয়েই চলে গেলেন স্মিথ। একাদশ জানতে অপেক্ষা করতে হবে টসের আগমূহুর্ত পর্যন্ত।
মুশফিকুর রহিম এটিকে দেখছেন নৈতিক জয় হিসেবে। মুশফিকের দাবি, ‘এটা অস্ট্রেলিয়ার কৌশল। তিন স্পিনার খেলাবে কি খেলাবে না সেই ধোঁয়াশার কারণেই একাদশ ঘোষণা করেনি তারা। এটা আমাদের নৈতিক জয়ও বটে।’
তবে ম্যাচের আগের এই জয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নাই। কারণ বিপদে থাকলেও অস্ট্রেলিয়া কতোটা বিপজ্জনক এবং সমীহ করার মতো দল তা মনে করিয়ে দিলেন মুশফিক। ‘গত টেস্টে তারা যে লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছে, তাতে তারা জেনে গেছে যে হোম কন্ডিশনে আমরা কতোটা ‘ডেঞ্জারাস’। আমাদের এই বার্তা খুব ভালোভাবে তাদের কাছে গেছে। তারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে যে, আমাদের বিপক্ষে কিছু করতে হলে প্ল্যান করেই করতে হবে।
তবে ম্যাচের আগে কোনভাবেই তৃপ্ত হতে চাননা বাংলাদেশ অধিনায়ক। স্বাগতিকরা অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করেই সিরিজ জিততে চায় বাংলাদেশ। মুশফিক জানালেন ‘আমাদের এটা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের কাজগুলো ঠিকঠাক করতে হবে। আমার মনে হয় প্রথম টেস্টে আমরা যা করেছি সেটাই করতে হবে, আরো ভালভাবে।’
মুশফিকের মত বাংলাদেশি সমর্থকরাও চায় অস্ট্রেলিয়ার সাথে যেন ট্রফির ভাগ নিতে না হয়। শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েই সিরিজ জয়ের পূর্ণ স্বাদ নিতে যায় টাইগার সমর্থকেরা।