দুই বারের বন্যায় লালমনিরহাটের ক্ষয়ক্ষতি পরিমান প্রায় আট শত কোটি টাকা। অবকাঠামো ক্ষয়-ক্ষতির পাশাপাশি সেতু, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, খামার ও ফসলের ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেব মোড় এলাকার সাবেক ইউ-পি সদস্য জাকির হোসেন জানান, এবারেই স্মরণ কালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে লালমনিরহাটে। দুই দফার বন্যায় ভেঙ্গে গেছে ঘরবাড়ী, স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট, সেতু-কালভার্টসহ অনেক স্থাপনা। তলিয়ে আছে ফসলি জমি। এখনো বেশিরভাগ এলাকায় স্বাভাবিক হয়নি সড়ক যোগাযোগ।
জেলার ক্ষতিগ্রস্থ দপ্তর গুলোর তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় লালমনিরহাট এলজিইডি’র আওতায় ১শ ৮৪ কিলোমিটার সড়কপথ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে ৫৩টি সেতু কালভার্ট। আনুমানিক ক্ষতির পরিমান ১শ ৬৫ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপদের জাতীয় মহাসড়কের ৪০ কিলোমিটারে ক্ষতির পরিমান ৫৩ কোটি টাকা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩ টি বাধের ২ কিলোমিটার বিলীন ও ৩ টি বাধের ১০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা হয়েছে ১ শ ৯৪ কোটি টাকা। কৃষি বিভাগের ৩১ হাজার ১শ ৩৫ হেক্টর রোপা আমন ও ২শ ৬৫ হেক্টর সব্জী তলিয়ে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি ৮৫ কোটি টাকা।
লালমনিরহাট রেলওয়ে সুত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট রেল বিভাগের আওতায় ক্ষতিগ্রস্থ ১শ ৪০ কিলোমিটার রেলপথের ৯ টি পয়েন্টে টেকসই মেরামতে প্রয়োজন ৭২ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও ৭৭০২ টি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে মৎস্য বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি ১১ কোটি টাকা, ৬৫ হাজার হাস-মুরগি, গরু-ছাগল বন্যা আক্রান্ত ও ১৬ টি খামার বিনষ্ট হয়ে প্রাণী সম্পদ বিভাগের ক্ষতির পরিমান ৭৮ লাখ এবং বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, কমিউনিটি ক্লিনিক ভেঙ্গে গিয়ে অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ধরা হয়েছে প্রায় ২শ কোটি টাকা।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, ইতোমধ্যে বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান নিরুপন করে মেরামত ও পুর্ণবাসনে বরাদ্দের জন্য উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের নিকট তালিকা পাঠানো হয়েছে।
বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন জানান, বন্যায় প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে পুর্ণবাসন করা হবে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না।
তবে শুধু আশ্বাস নয়। দীর্ঘ সময় ধরে পিছিয়ে থাকা উত্তরের পশ্চাৎপদ বন্যা কবলিত লালমনিরহাট জেলার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে তরাণ্বিত করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রদানের পাশাপাশি বাড়তি নজর রাখবে সরকার-এমনটি আশা করেন লালমনিরহাটের মানুষ।