গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ বন্যা আর প্রাকৃতিক দূর্যোগে নাজেহাল গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষগুলো একমাত্র সম্বল গবাদী পশু নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন। গবাদী পশুর পাশাপাশি অস্ত্রের মুখে নারীদের সম্ভ্রম পর্যন্ত লুটে নেয় ডাকাতরা। গবাদী পশুর উপর ডাকাতের চোখ পড়ায় নির্ঘূম রাত কাটছে চরবাসীর। রাতের বেলা পুলিশি টহল চালু থাকলেও চরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবী জন প্রতিনিধিদের।
ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা মূল-ভূখন্ড থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর ও ফুলছড়ি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। রাত নয়টার পর থেকেই এই ব্রহ্মপুত্র নদে শুরু হয় ডাকাতদের আনাগোনা। রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে চরাঞ্চলে ঘুমিয়ে পড়া নিরীহ মানুষ গুলোর উপর হামলে পড়ে তাদের সর্বস্ব লুটে নেয় সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। অভিযোগ আছে ডাকাতির পর পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়া, জামালপুর এবং কুড়িগ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেয় তারা।
এসব থেকে রক্ষা পেতে রাতের বেলা নৌকার আওয়াজ শুনলেই হৈ হুল্লোড় করে ওঠেন ফুলছড়ি উপজেলার উত্তর খাটিয়ামারী চরের মানুষ। মধ্য রাতে মানুষ যখন ঘুমে বিভোর। তখন লাঠি আর বাঁশি নিয়ে রাত জেগে থাকতে হয় চরাঞ্চলের শিশু ও নারী-পুরুষদের।
খাটিয়ামারি চরের বাসিন্দ গোলাপ হোসেন জানান, গরু রক্ষার্থে বাধ্য হয়ে ঘুম বাদ দিয়ে পাহারা দিতে হয় আমাদের। কখন যে ডাকাতের নৌকা এসে অস্ত্রের মুখে গরু লুট করে নিয়ে যাবে সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। একই গ্রামের জসিজল হক বলেন, খুব কষ্ট পরিশ্রম করে গবাদী পশু লালন-পালন করার পর সেই গরু যদি সশস্ত্র ডাকাতের হামলা থেকে রক্ষা না পায় তাহলে আমাদের চরবাসীর আজীবনের সঞ্চয় লুট হয়ে যায়। তখন আমরা পথের ফকির হয়ে যাই। ফুলছড়ি ইউনিয়নের চরখোলাবাড়ি গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, ডাকাতেরা গবাদী পশুর পাশাপাশি লুট করে নেয় মা-বোনদের সম্ভ্রমও। অস্ত্রের মুখে বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে তাদের ধর্ষন করে ওই নরপশুরা। কেউ বাধা দিতে গেলেই তাকে জীবন দিতে হবে। বাধ্য হয়ে জীবন-জীবিকা রক্ষায় চরের মানুষের এই প্রতিরোধ।
ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জালাল জানান, কেবল টহল নয়, চরগুলোতে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হলে ডাকাতদের অত্যচার থেকে রেহাই মিলবে মানুষের। গ্রামবাসি রাতে জেগে তাদের একমাত্র সম্বল গবাদী পশু রক্ষায় লাঠি, বাঁশি নিয়ে পাহারা দিচ্ছে। ইউনিয়নের পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করা হচ্ছে। কোন গ্রামে ডাকাত পড়লে বাঁশি বাজার সাথে সাথে লাঠি শোঠা নিয়ে চিল্লাচিল্লি করলে প্রাণ ভয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
ফুলছড়ি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান বলেন, বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে ডাকাতি ঠেকাতে জনগণকে সাথে নিয়ে ঐকবদ্ধ প্রতিরোধ গড়েছেন তারা। রাতভর ব্রহ্মপুত্র নদে জোরদার করা হয়েছে পুলিশি টহল। এতে খানিকটা সুফলও পেয়েছেন চরবাসী। তালিকাভূক্ত ডাকাতদের ধরতে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে বলেও জানালেন তিনি।
এসব বিষয়ে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ এ প্রতিবেদককে জানান, কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে চরের মানুষ গরু,ছাগল পালন করে। এ সুযোগে ডাকাতরা তাদের গবাদী পশু রাতের আধারে লুট করে নিয়ে যায়। চরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্ত বলে তিনি জানান। তবে এসব ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশ ও নৌপুলিশের সমন্বয়ে নৌপথে পুলিশিং টহল জোরদার করার চেষ্টা চলছে।