আপনার দীর্ঘদিনের ভূতাত্ত্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী এখন রাজনৈতিক সর্বনাশায় ভূগছেন এবং বলছেন আপনি আংশিকভাবে এর জন্য দোষী। আগ্রাসী মার্কিন আইনপ্রণেতারা আপনাকে নতুন নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ দিচ্ছে। এই চাপের মুখে তাদের প্রেসিডেন্ট বলছেন তিনি এতে সাক্ষর করবেন। তাহলে স্বৈরতন্ত্র আবারো কি মাথা চাড়া দিচ্ছে?
মস্কোর জন্য এখন এটি কিছু ‘গেম থিউরি’ সময়।
২০১৬ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের বিষয়ে ক্রেমলিনের নিজের অস্বীকৃতিতে বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস যাই থাকুন না কেন একথা অনস্বীকার্য যে, রাশিয়া এখন ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শত্রু।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যে ‘হাত-পা বাঁধা’ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে একটি আক্রমনাত্মক বিদেশি নীতি গ্রহণ করা হয়েছে আর মস্কো প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিকল্প অপশন খুঁজছে।
‘ট্রাম্প ট্রেনে’র আলস্যে সময় কাটানোর পর রাশিয়া আরো একবার তার নির্মম বাস্তবতাকে সঞ্চালন করছে। যেটি তার রাজনৈতিক পরিচয়কে তাড়িত করছে এবং এন্টি-হিরো হিসাবে তার ভূমিকাকে আলিঙ্গন করছে।
টেলিভিশন রাজনৈতিক ভাষ্যকার কনস্ট্যান্টিন ইগার্ট ক্রেমলিনের চিন্তা-ভাবনাকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘ঠিক আছে, আপনি মনে করছেন আমরা খারাপ লোক বা আমরা খারাপ লোক হতে যাচ্ছি এবং আমরা দেখব, আপনি এটি পছন্দ করেন কিনা।’
শুক্রবার কয়েক ডজন, সম্ভবত কয়েক শ’ মার্কিন কূটনীতিক এবং দূতাবাসের কর্মচারীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় রাশিয়া। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিশোধের প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে রুশ নেতার হতাশা উপর ভিত্তি করে। তিনি (পুতিন) হয়ত ভাবছেন যে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি সব কিছুই পরিবর্তন করতে পারে।
রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই পশ্চিমের প্রতি বেশ রাগান্বিত। এই অবস্থা কয়েক বছর আগের চেয়ে আরো বেশি খারাপ হয়ে ওঠেছে। যখন প্রতিবেশি ইউক্রেনে পশ্চিমাপন্থী বিপ্লবের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তখন এটিকে রাশিয়ার টেলিভিশনে ফ্যাসিজমের প্রতিধ্বনির সঙ্গে জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহ হিসেবে প্রচার করা হয়।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিডিয়া উইংয়ের একজন আন্দ্রেই কেলসনিকভ বলেন, ‘প্রথমবারের (২০১৪) নিষেধাজ্ঞার দ্বারা আমাদের কেউ ভীত হয়নি। এটা ছিল অনেকটা হাস্যকর।’
সম্প্রতি পুতিনের সঙ্গে ফিনল্যান্ড সফর করা আন্দ্রেই কেলসনিকভ বলেন, ‘এখন রাশিয়ান কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন একটি ধারনা জন্মেছে যে, সবকিছুতেই তারা খুব সিরিয়াস এবং তারা সবাই ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে তাকিয়ে আছেন; তিনি কি করেন তা দেখার জন্য।’
পুতিন সম্পর্কে একটি সাধারণ প্রবাদ হল যে, তিনি একজন চতুর পরিকল্পনাকারী কিন্তু দুর্বল কৌশলবিদ। তিনি ইউক্রেন এবং জর্জিয়ার মতো প্রতিবেশিদের সঙ্গে সংঘর্ষে ঊর্ধ্ব হাত নিয়েছেন এবং এভাবেই তার চারপাশের শত্রুদের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অসহায়ত্বে ২০১৬’র নির্বাচনে রাশিয়ার সাইবার-হস্তক্ষেপ এখন অনুরূপভাবে প্রাচীন গ্রীক নৃত্যের মতোই মনে হচ্ছে।
শরৎকালের জন্য ভবিষ্যদ্বাণী নিঃসন্দেহে একটি ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’।
মস্কোর স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ এবং আধুনিক রাশিয়ান বিশ্লেষকদের একজন আলেকজান্ডার সিডরোভ বলেন, ‘যদি বিলটি অনুমোদিত হয় এবং খুব সম্ভবত এটি গ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই স্নায়ু যুদ্ধের মঞ্চে প্রবেশ করবো এবং স্নায়ু যুদ্ধের অর্থ হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া।’
পুতিন জানিয়েছেন, তারা ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত বিলের সংস্করণের উপর নির্ভর করবে। ‘কর্মারস্যান্ট’ নামে মস্কোর একটি দৈনিক ক্রেমলিনের বিদেশি নীতি বিষয়ে কিছু বিকল্প প্রস্তাব করেছে। আর তা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টাইটানিয়াম বা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রপ্তানি বন্ধ করতে হবে। এটি আমেরিকান এয়ারলাইন এবং ইউরেনিয়াম শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। মার্কিন কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো ব্লক করে দেয়া। এর মধ্য রয়েছে নতুন করে উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে জাতিসংঘের ভোট ও সিরিয়াকে সহযোগিতা করা এবং গুগল বা মাইক্রোসফ্টের মতো মার্কিন কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে লাথি মেরে বের করে দেয়া।
ওয়াশিংটন পোস্ট অবলম্বনে