ভারতের উত্তরপ্রদেশের নয়ডার গৃহ-পরিচারিকা নিয়ে গোলমালের জেরে ‘বাংলাদেশি তাড়াও’ অভিযানে নেমেছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার থেকে নয়ডায় কাজ করতে যাওয়া প্রায় ৪০টি পরিবার প্রবল বৃষ্টির মধ্যে পথে এসে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংখ্যালঘু ও বাংলাভাষী হওয়ায় তাদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ‘বাংলাদেশি তাড়াও’ অভিযানে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা পুরোপুরি মদদ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজ্যের মানুষের হেনস্থার অভিযোগ কানে যেতে তৎপর হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলতে তৃণমূলের একটি মহিলা প্রতিনিধি দল পাঠানোর পাশাপাশি মমতা রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে বলেছেন গোটা ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে জেনে তাকে জানাতে। প্রয়োজনে সংসদে বিষয়টি নিয়ে উত্থাপন করতেও বলা হয়েছে ওই সংসদ সদস্যকে। মুখ খুলেছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।
ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। নয়ডার একটি আবাসনের বাসিন্দা মিতুল শেট্টির বিরুদ্ধে তার পরিচারিকা জোহরা বিবিকে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। পরের দিন সকালে স্ত্রীর খোঁজে আত্মীয় ও পড়শিদের নিয়ে এসে ভিতরে ঢুকতে চায় জোহরার স্বামী। এসময় আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে মারামারি লেগে যায়। অভিযোগ জানায় দু’পক্ষই। শেট্টিরা জোহরার নামে ১০ দশ হাজার টাকা চুরি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করে। ইতোমধ্যেই ওই অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জোহরার অভিযোগ, তাকে সারা রাত আটকে রেখে মারধরও করা হয়। সকালে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান তিনি।
জোহরার অভিযোগের সত্যতা মানতে রাজি নয় উত্তরপ্রদেশ তথা কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। তাদের দাবি, শুধু শেট্টি পরিবারের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। প্রয়োজনে শেট্টি পরিবারের হয়ে আইনি লড়াই করার পক্ষে নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মহেশ শর্মা। তার দাবি, ‘এরা সকলেই কোথাকার তা ভাল করেই জানা আছে। কারণ আমি নিজেও নয়ডাতেই থাকি।’
মহেশের দাবি, হামলাকারীরা যাতে অন্তত এক বছর জামিন না পায় তার ব্যবস্থা করবেন তিনি।
ওই আবাসনে ফ্ল্যাট রয়েছে প্রায় দু’হাজার। কাজ করেন প্রায় ছ’শো পরিচারিকা। ঘটনার পরে ঢোকা নিষেধ হয়ে গেছে অর্ধেকের বেশি পরিচারিকার। ভেঙে দেয়া হয়েছে তাদের ঝুপড়ি, খাবার দোকান। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দাবি, তারা কুচবিহারের বাসিন্দা। ভোটার কার্ডও রয়েছে তাদের। তাতে অবশ্য বিশেষ হেলদোল হয়নি স্থানীয় প্রশাসনের।
অভিযোগ উঠেছে, এদের তাড়ানোই এখন বিজেপি সরকারের লক্ষ্য। মহেশ শর্মার দাবি, ‘যারা এতে সাম্প্রদায়িকতার রং লাগানোর চেষ্টা করছেন তাদের আমাদের সংগঠনের সদস্যরাই দেখে নেবে।’
মদনলাল খুরানা যখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন এভাবে বাংলাদেশি তাড়াও অভিযানে নেমেছিল বিজেপি সরকার। বাংলাদেশি অভিযোগে বহু লোকের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছিল। সেই ভয় আবার ফিরে আসছে খেটে খাওয়া বাঙালি পরিবারগুলোর ভিতরে।
সূত্র: আনন্দবাজার