খবরবাড়ি ডেস্কঃ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গাইবান্ধা–৩ (পলাশবাড়ী–সাদুল্লাপুর) আসনের বিভিন্ন মন্দির, মঠ ও শ্মশান পাহারার উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয়েছে। পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের রাধাগোবিন্দ ও কালি মন্দিরের সভাপতি শ্রী হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস আগামী ৫ জানুয়ারি সোমবার ২০২৬ তারিখে উক্ত মন্দিরে এ এলাকার সব মন্দির, মঠ ও শ্মশান কমিটির সদস্যদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানান। তার আহ্বানের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যন্ত দুই উপজেলার মন্দির,মঠ ও শ্মশান গুলোতে পাহাড়াদার (স্বেচ্ছাসেবী) নজরদারি জোরদার করা।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ীর একাধিক সনাতনী হিন্দু সচেতন নাগরিকের সঙ্গে কথা বলা হলে তারা জানান, নির্বাচনকে ঘিরে মন্দির বা শ্মশানে বড় ধরনের হামলার কোনো আশঙ্কা তারা দেখছেন না। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, অতীতের কোনো জাতীয় নির্বাচনেও এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো সন্ত্রাসী হামলার নজির নেই। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকলেও সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী এবং তা মেনে চলে। হরিদাস বাবু হঠাৎ কেনো এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
পলাশবাড়ী কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের সভাপতি দিলিপ চন্দ্র সাহা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংসতার কোনো লক্ষণ তিনি দেখছেন না। তবে সতর্ক থাকা সব সময়ই ভালো বলে তিনি মনে করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সনাতনী ব্যক্তি বলেন, হরিদাস চন্দ্র মন্দির প্রতিষ্ঠা করে হিন্দু সনাতনীদের জন্য ভালো কাজ করছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার কিছু পোস্ট অনেক সময় সনাতনীদের বিব্রত করে, যা তার অবস্থান থেকে শোভন নয়। তার ধারণা, অতিরিক্ত পরিচিতি পাওয়া, আলোচনায় থাকা, মন্দিরে দর্শনার্থী আকর্ষণ কিংবা ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের ভাবনা থেকেও এ ধরনের বক্তব্য ও পোস্ট আসতে পারে। তিনি আরও বলেন, সনাতনী নেতৃত্ব দেওয়ার ইচ্ছা ইতিবাচক হলেও তা যদি ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে যায়, সেটি দুঃখজনক।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ীর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নুরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মন্দির বা মঠে হামলার কোনো আলামত তিনি দেখছেন না। আগের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতাও মোটামুটি শান্তিপূর্ণ।
হরিদাস চন্দ্র তরনীদাসের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জেলা পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে মন্দির, মঠ ও শ্মশানে এই মুহূর্তে কোনো ঝুঁকির আলামত নেই। তবে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সব ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তায় পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও জানান, হরিদাস চন্দ্র তরনীদাস কী কারণে দুই উপজেলার সনাতনী হিন্দুদের নিয়ে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন, সে বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখবে।
সব মিলিয়ে নির্বাচনকে ঘিরে সতর্কতার বার্তা থাকলেও স্থানীয় সমাজ, সাংবাদিক মহল ও প্রশাসনের বক্তব্যে বড় ধরনের আশঙ্কার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.